কুমিল্লায় তিন উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত, ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
আদর্শ সদর, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিদারুণ কষ্টের রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। এসব এলাকার শত শত মাছের ঘের, আউশ- আমন ধানের বীজতলা এবং শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
আজ বুধবার (২১ আগস্ট) সদর উপজেলায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে। তবে নদী তীরবর্তী অন্যান্য অঞ্চলে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ডাকাতিয়া নদীর কুমিল্লা অংশেও পানি বেড়েছে। এছাড়া কুমিল্লার অন্যান্য নদীতেও পানি বেড়ে তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কুমিল্লার টেলিপ্রিন্টার অপারেটর ছৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, 'কুমিল্লায় গত তিন দিনে ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে অনুপাতে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে এ ধরনের বন্যা হওয়ার কথা নয়।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের ত্রিপুরাসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যে বন্যা হচ্ছে। ত্রিপুরার ডাম্বুর লেক এলাকায় গোমতীর উৎসমুখের গেট খুলে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।'
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, 'আমাদের পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। বন্যা আগেও দেখেছি,তবে এমন বন্যা কখনো দেখিনি।'
নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, 'এ উপজেলার প্রায় শতভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা দুর্গতদের তালিকা করার চেষ্টা করছি। উপজেলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চালু করা হয়েছে। তালিকা করা শেষ হলে ত্রাণ সহায়তা শুরু হবে।'
ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী চৌদ্দগ্রামের গুণবতী গ্রামের বাসিন্দা আলা উদ্দিন বলেন, 'এ গ্রামের কিছু বাকি নেই। বাড়িঘর, মাছের ঘের, ফসল সব পানির নিচে।'
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, 'এ উপজেলার মানুষের সাথে কথা হয়েছে। তারা এমন বন্যা মোকাবিলা করেনি। আকস্মিক এমন বড় বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলো থেকে বিচ্ছিন্নভাবে খবর পাচ্ছি। অধিকাংশ জায়গায় চেয়ারম্যানরা কাজে যোগ না দেওয়ায়, ইউপি সচিবদের থেকে তথ্য নিচ্ছি। তথ্য পেলে ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়ত শুরু করব।'
বুড়িচংয়ের বাজেবাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, 'আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি নিচু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছি। সাপ-বিচ্ছু ঘরে ঢুকে পড়তে পারে।'
আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, 'গোমতী নদীর সদও অংশের পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রাবাহিত হচ্ছে। উপজেলার পাঁচথুবি ও আমড়াতলি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, 'নদীর পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আশাব্যঞ্জক কোনো খবর নেই। গোমতীর বেশ কয়েকটি বাঁধে ফাটল ধরেছিল। গতরাত থেকে সেগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। পানি বাড়লে আর কিছুই করার থাকবে না।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, 'এবার ২০ শতাংশ জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে। এর অধিকাংশই প্লাবিত হয়ে গেছে। নিচু অঞ্চলের শাকসবজি একদম শেষ। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে আলোচনা করেছি। প্রকৃত অবস্থা জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, 'বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুরো জেলার বন্যার চিত্র জানা যায়নি। জেলার ১৭ উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা শুরু হবে।'