বন্যায় বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রাম: ভেঙে পড়েছে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা
টানা বৃষ্টির কারণে বন্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ফেনী থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত রেলপথসহ প্রধান পরিবহন রুটগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। যার কারণে চট্টগ্রাম পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার মধ্যে ক্রমবর্ধমান পানির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সকল ট্রেন, দূরপাল্লার বাস, এবং পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ছেড়ে যাওয়া যানবাহনগুলো এখন মিরসরাই এলাকায় আটকা পড়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট খায়রুল আলম বলেন, "ফেনীর লালপুল থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কের কয়েকটি অংশে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।"
এদিকে, দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু চট্টগ্রাম বন্দর এই পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, যানবাহনের অভাবে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, জাহাজ থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং আপাতত প্রভাবিত হয়নি।
ফারুক আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে কন্টেইনার জ্যামের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বৈরি আবহাওয়ার কারণে আউটার অ্যাংকরেজে কার্গো হ্যান্ডলিং ইতোমধ্যে ব্যাহত হয়েছে।
দেশের ৯০% রপ্তানি পরিচালনা করা বেসরকারি ইন্টারল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোগুলোও (আইসিডি) এই পরিস্থিতির কারণে সমস্যায় পড়েছে।
বাংলাদেশ ইন্টারল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি আইসিডিতে রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহনের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, চট্টগ্রামের ভেতরে রপ্তানি পণ্য পরিবহনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
এই সড়ক এবং রেল সেবা স্থগিত হওয়া একটি বড় ধাক্কা, কারণ প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৬০০টি যানবাহন চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য অঞ্চলে যাওয়ার প্রধান রুটগুলি বন্যাকবলিত ফেনী এবং কুমিল্লার মধ্য দিয়ে যায়।
আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ নিশ্চিত করেছেন যে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম থেকে সকল বাস সেবা বন্ধ রয়েছে।
রেলপথও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ফেনী থেকে ফজিলপুর পর্যন্ত ট্র্যাকের অংশগুলো পানিতে ডুবে গেছে এবং সেতুর উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'ট্র্যাকের উপর পানি থাকার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি সরে গেলে আমরা রেললাইনের ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করব।'
এই নজিরবিহীন বিচ্ছিন্নতা দেশের লজিস্টিক্স এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা সামনের দিনগুলোতে আরও বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।