খুলনা বিভাগে মাছ উৎপাদনে এগিয়ে যশোর
খুলনা বিভাগে মাছ উৎপাদনে ফের প্রথম স্থানের দখন নিয়েছে যশোর জেলা। প্রতি বছর জেলাটিতে মাছ উৎপাদন বাড়েই চলএছে।
মৎস অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলাটিতে মাছ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ১০৭ টন। এছাড়া, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ৩১ হাজার ১৪৩ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৩ টন মাছ।
অন্যদিকে, মাছ উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর জেলা। সেখানে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন। বিভাগের ১০ জেলায় বছরে মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন। এরমধ্যে চিংড়ি মাছ রয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ২১৮ মেট্রিন টন।
এদিকে মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলায় বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭৩ মেট্রিন টন, চুয়াডাঙ্গায় ১৬ হাজার ৯৫৪ মেট্রিন টন, ঝিনাইদহে ৩৮ হাজার ৮৭৬ মেট্রিন টন, খুলনায় ১ লাখ ১০ হাজার ৯৫ মেট্রিন টন, কুষ্টিয়ায় ৩২ হাজার ২০২ মেট্রিক টন, মাগুরায় ১৩ হাজার ৮৪৫ মেট্রিন টন, নড়াইলে ১৪ হাজার ২৬৬ মেট্রিন টন এবং সাতক্ষীরায় মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৭১ মেট্রিন টন।
মাছ উৎপাদনে যশোর জেলা স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবছর জেলাটিতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৯২ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন। ২০১৮-২৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টণ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৬১০ মেট্রিক টন।
যশোর জেলায় ২২ প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় রুই মাছ। গত বছর জেলায় রুইমাছ উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন। পাঙ্গাস মাছ হয়েছে ১১ হাজার ৬৩৬ টন, তেলাপিয়া ১৭ হাজার ৯০৫ টন, কৈ ২ হাজার ৭৭৮ টন, শিং-মাগুর ৫ হাজার ৯৩৪ দশমিক ২ মেট্রিক টন, গুলশা-পাবদা ১৭ হাজার ৭১৩ টন, গলদা-চিংড়ি ৯ হাজার ৫৬০ টন, বাগদা চিংড়ি ৩৫৪ টন, অন্যান্য চিংড়ি ৮৯ দশমিক ৫ টন এবং অ্যান্যান জাতের মাছ রয়েছে ১৪ হাজার ৯৭২ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন।
এই জেলার অন্যতম মৎস্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল অ্যাকোয়া ফিস। ২ হাজার বিঘা জমির ওপর ৮টি ইউনিট চালু রয়েছে তাদের। যেখানে প্রতিদিন ১০ মেট্রিক টন মাছ ও মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। এখানে ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আফিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আফিল উদ্দিন জানান, "আফিল অ্যাকোয়া ফিসে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় বিপুল মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। যেখানে মাছের গুণগতমান ঠিক রাখা হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে, তেমনি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে মাছের উৎপাদনে যাব।"
ঝিকরগাছা উপজেলার রঘুনাথনগর গ্রামের মৎস্যচাষী এসএস আহমেদ ফারুক জানান, তিনি ৩২ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন করে আসছেন। ৫২ বিঘা জমির উপর তার মৎস্য ঘের রয়েছে। যেখানে বছরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে কোটি টাকার।
"এরমধ্যে পাবদা মাছ বছরে রপ্তানি করি ৪০ মেট্রিক টন। বর্তমানে আমার ঘেরে পাবদা, টেংরা, রুই ও ভেটকি মাছ আবাদ হচ্ছে," যোগ করেন তিনি।
যশোর জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, বছরে বেনাপোল দিয়ে মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে প্রায় ৬০ লাখ কেজি— যার রপ্তানি মূল্য দেড় কোটি ডলার।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানান, "গত তিন বছরে জেলায় চাহিদার তুলনায় ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৫ মেট্রিক টন মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে। মাছ উৎপাদনে খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোর প্রথম স্থানে রয়েছে। প্রতিবছর জেলাটিতে মাছ উৎপাদন বাড়ছে।"