পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তের হেফাজতে মৃত্যু, হাসিনা ও জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে হত্যামামলা
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আসামি বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুর রহিমের কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের নামে হত্যামামলা করা হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আক্তারুজ্জামানের আদালতে আব্দুর রহিমের ছেলে অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ এই মামলার আবেদন করেন। এসময় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক বিজিবি মহাপরিচালক ও সাবেক সেনাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং পিলখানা বিদ্রোহ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, নুর আলম চৌধুরী লিটন, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু ও ২০১০ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেল সুপার এবং চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম।
বাদীর আইনজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১০ সালের ২৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে আসামিরা হত্যা করেন। এ ঘটনায় তখন চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। আজ আদালত আমাদের মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, চকবাজার থানার সেই অপমৃত্যু মামলার নথি তলব করে আবেদনটি নথিভুক্ত করেছেন।
মামলায় বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সরকার ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় সুপরিকল্পিতভাবে বিদেশি এজেন্ট নিয়োগ করে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। পরে বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে চকবাজার থানায় হত্যামামলা দায়ের করা হয়।
বাদী অভিযোগ করেন, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম ডিএডি হিসেবে পিলখানায় কর্মরত ছিলেন। তাকেও বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় আসামি করে আটক করা হয়। পরবর্তীতে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে কারাগারে হত্যা করে।
তিনি উল্লেখ করেন, তার বাবা আব্দুর রহিমকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার মধ্যে হত্যার চেষ্টা করে কয়েকজন। কিন্তু সাধারণ সৈনিকেরা তার বাবাকে ভালোবাসতেন বিধায় তারা রক্ষা করেন। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে কোনো একদিন ডিএডি আব্দুর রহিমকে পিলখানার ঢাকা সেক্টরের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে জেনারেল আজিজ ও আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলসহ আরও কয়েকজন পিলখানার ঘটনার রাজসাক্ষী হতে বলেন। তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে রাজসাক্ষী হয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলেন।
'আমার বাবা মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২০১০ সালের জুলাই মাসে অত্র মামলার বাদী ও তার পিতাকে জেলারেল আজিজ ও মোশারফ হোসেন কাজলসহ অন্য ৪/৫ মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে ও ভয়ভীতি দেখায়। কিন্তু বাদীর পিতা মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজী না হওয়ায়, আসামীদের হুকুমে অপরাপর আসামীরা ২০১০ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাদীর বাবার শরীরে ইনজেকশন পুশ করার মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়। পরিকল্পিতভাবে আসামিরা তার বাবাকে হত্যা করেছেন' - বলে বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।