‘নতজানু নীতি গণআন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’: পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি বাতিলের নিন্দায় বিবৃতি
অন্তর্বর্তী সরকারের পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল ঘোষণার নিন্দা করেছেন দেশের ১২২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
'এর [বাতিলের সিদ্ধান্ত] মধ্য দিয়ে সরকার মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সরকারের এ নতজানু নীতি গণআন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী,' বলেন তারা।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে ধর্মের নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জায়গা দখল করছে।'
ভিন্নচিন্তা-মত, ভাষা-ধর্ম-জাতি, লিঙ্গগত পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে জন-উষ্মা উসকে দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নস্যাতের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেন বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের লক্ষ্যে সরকার গঠিত সমন্বয় কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা এবং অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের বিরুদ্ধে 'ইসলাম-বিদ্বেষের' সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন ধর্মীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শায়খ আহমাদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মামুনুল হক।
'আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা জানান দেয়, এ ধরনের অভিযোগগুলো স্পষ্টত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয় এবং এসব অভিযোগের মধ্য দিয়ে সমাজের ব্যাপকসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভ্রান্তি ও অসহিষ্ণুতা সৃষ্টির চেষ্টা আছে বলে আমরা মনে করি।'
'গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে সংস্কারের পথে হাঁটছে, এ ধরনের তৎপরতা সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের অন্তরায়,' বলা হয় বিবৃতিতে।
'আমরা সমাজের সকল ভিন্ন পথ-মত ও চিন্তার অধিকার, চর্চার অধিকারকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব নেবে — সেরকম রাষ্ট্রই কামনা করি। জনপ্রিয়তাবাদী প্রবৃত্তি সরকারের সংস্কারভাবনায় গেড়ে বসলে কোনোভাবেই ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম হতে পারে না।'
দ্রুত পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি পুনর্বহালের মধ্য দিয়ে সমাজে অস্তিত্বশীল সব গণতান্ত্রিক অংশ ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের পথে অন্তর্বর্তী সরকার অনড় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেছেন বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, জোবাইদা নাসরীন, ইলিরা দেওয়ান, বর্ণালী সাহা, ফেরদৌস আরা রুমী, মারজিয়া প্রভা, কল্লোল মোস্তফা, কামার আহমাদ সাইমন, আবু সাঈদ খান, মাহা মির্জা, জোবাইদা নাসরীন, ফাহমিদুল হক প্রমুখ।