গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে মাহমুদ আব্বাসের প্যালেস্টানিয়ান অথরিটি কী ভূমিকা রেখেছে?
প্যালেস্টানিয়ান অথরিটির (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সর্বশেষ গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) দাঁড়িয়ে, ইউএনজিএ-তে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের পক্ষে উত্থাপিত রেজ্যুলেশনে হ্যাঁ ভোট দেওয়ার জন্য ১২৪টি দেশকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়া, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আব্বাস গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ, অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান অনুপ্রবেশ ও বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা জানান।
তবে সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর পার করা অনেক ফিলিস্তিনির কাছে, জাতিসংঘে আব্বাসের কথাগুলো একঘেয়ে ও অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।
ফিলিস্তিনি থিংক ট্যাংক আল শাবাকার সহ-পরিচালক ইয়ারা হাওয়ারি আল জাজিরাকে বলেন, ''ফিলিস্তিনিরা যে ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হচ্ছে, পিএ শুধু মুখে মুখে এর প্রতিবাদ করেছে। অন্যদিকে তারা পশ্চিম তীরে সাধারণ নাগরিকদের বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ দমন করে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের জন্য 'সাব-কন্ট্রাক্টর' হিসেবে ভূমিকা পালন অব্যাহত রেখেছে।''
তিনি বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে পিএ দৃশ্যপট থেকে নিরুদ্দেশ রয়েছে। তারা শুধু বিভিন্ন সময় কয়েকটি মন্তব্য করেছে বা এমন বিবৃতি দিয়েছে যা আসলে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।'
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অসলো চুক্তির অধীনে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাহমুদ আব্বাস পিএ'র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর পিএ'র নের্তৃত্ব গ্রহণ করেন আব্বাস। তিনি ক্ষমতা লাভের পর থেকেই পিএ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, জাতিসংঘকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জনিয়েছে এবং ফিলিস্তিনে সংঘটিত অপরাধের তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রচারণা চালিয়েছে।
এ পর্যন্ত তার সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো ২০১২ সালে জাতিসংঘের অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ।
পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি আমেরিকান ব্যবসায়ী স্যাম বাহুর আল জাজিরাকে বলেছেন, বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি মনে করেন যে পিএ বা আরও ভালোভাবে বললে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্ব 'নিরুদ্দেশ' হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, '৭ অক্টোবরের পরও পিএ'র কাজের ধরন বদলায়নি। আগেও তাদের কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি, এখনও রাখতে দেখা যাচ্ছে না। তারা ফিলিস্তিনের মাটিতে অনুপস্থিত, রাজনীতিতে অনুপস্থিত এবং ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনেও অনুপস্থিত।'
পটভূমি থেকে বিবর্ণ হয়ে গেছে
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে কয়েক বছর ধরেই পশ্চিম তীর ও গাজা উভয় জায়গার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পিএ'র জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। কারণ তারা ক্রমবর্ধমান সামরিক ও বসতি স্থাপনকারীদের (সেটেলার) সহিংসতা থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দমনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের 'সুরক্ষা সমন্বয়' - একটি বিতর্কিত মার্কিন-প্রবর্তিত ব্যবস্থা। এর ভিত্তিতে পিএ সুরক্ষা বাহিনীকে ইসরায়েলের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে দেখা যায়, যা দীর্ঘদিন ধরে পিএ'র প্রতি ফিলিস্তিনিদের ক্রোধের একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিএ ধারাবাহিকভাবে সহিংস দমন-পীড়ন এবং ফিলিস্তিনিদের আটক করে যাচ্ছে। তারা শুধু ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিতদেরই লক্ষ্যবস্তু করে না, বরং পিএ'র সমালোচকদেরও লক্ষ্যবস্তু করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্দিরা নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন।
প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের জুনে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৯ শতাংশ ফিলিস্তিনি ৮৮ বছর বয়সী আব্বাসের পদত্যাগ চান এবং প্রায় ৬২ শতাংশ ফিলিস্তিনি এর বিলুপ্তির পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
প্রায় দুই দশক ধরে ফিলিস্তিনে বড় কোনো নির্বাচন হয়নি, যার অর্থ ফিলিস্তিনিদের পুরো একটি প্রজন্ম কখনও ভোট দেয়নি। এমনকি ইসরায়েল ভোটে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাখ্যান করার পর, ২০২১ সালে নির্ধারিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাতিল করেন আব্বাস।
পিএ দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের আশা পূরণে ব্যর্থ, তবে বিশেষ করে গত বছর ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তাদের নেতৃত্বের প্রতি ফিলিস্তিনিদের হতাশা আরও তীব্রতর হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির আরব সেন্টারের সিনিয়র ফেলো এবং প্যালেস্টাইন / ইসরায়েল প্রোগ্রামের প্রধান ইউসুফ মুনায়ের আল জাজিরাকে বলেছেন, 'আমরা ফিলিস্তিনি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি সংকটময়, তবে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রয়েছি। তবে আমরা পিএ'র কাছ থেকে সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখছি না; তারা মূলত পটভূমিতে অদৃশ্য হয়ে গেছে।'
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা থেকে দূরে থাকা পিএ ধারাবাহিকভাবে সেখানে চলমান আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে, তবে এর শেষের দিকে ভূমিকা রাখতে অক্ষম প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অধিকৃত পশ্চিম তীরের পিএ কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতেও ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ইসরায়েলি হামলা পিএ'র আক্ষমতাকে তুলে ধরেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অধিকৃত পশ্চিম তীরে অন্তত ৭৫২ জন নিহত হয়েছেন।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি