হত্যাচেষ্টা মামলায় আগাম জামিন পেলেন জেড আই খান পান্না
রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ ইনায়েত হোসাইনের বেঞ্চ তাকে আগাম জামিন দেন।
আদালতে জেড আই খান পান্নার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, আলী আহমেদ খোকন, মোহাম্মদ শিশির মনির, মোহাম্মদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামে এক আন্দোলনকারীকে গুলি ও মারধরের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
বিজিবির বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও পান্নাসহ মোট ১৮০ জনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। গত ১৭ অক্টোবর মামলাটি করেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের (৫২)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বাদীর ছেলে আহাদুল ইসলাম জুমার নামাজ শেষে মেরাদিয়া বাজারের পশ্চিমে শুক্কুর আলী গার্মেন্টস মোড় এলাকায় ছাত্র জনতার আন্দোলনে যোগদান করেন। এ সময় নাম জানা যায়নি এমন বিজিবি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্য আসামিদের নির্দেশে গুলি চালায়। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে, অসংখ্য ছাত্র জনতার সঙ্গে আহাদুলও বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে ভয়ভীতি দেখানোরও অভিযোগ উঠেছে। এজহারে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আহাদুলকে পরে নিজ এলাকার মেহেদীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে তিনি ১৪ দিন চিকিৎসা নেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই নাগরিকদের দ্বারা গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন জেড আই খান পান্না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মৃত্যু, গুলিবর্ষণ, গ্রেপ্তারসহ নির্যাতনের নানা ঘটনার সত্য উদ্ঘাটনে এ কমিশন গঠন করা হয়।
জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে করা হত্যাচেষ্টা মামলাকে 'মিথ্যা ও হয়রানিমূলক' উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
রোববার (২০ অক্টোবর) আসক-এর সিনিয়র সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফরজুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, জেড আই খান পান্না আসকের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায়সংগত দাবি এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে আটকের ঘটনায় আইনি লড়াইতে সম্পৃক্ত থেকেছেন। তার নীতি এবং আদর্শের জায়গায় তিনি সরব ছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না জীবনভর মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন এবং বলছেন। সাধারণ মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনও তিনি ক্রসফায়ার, গুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টিতে পড়েছেন, আবার কখনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করতে বিশেষ কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টিতে পড়েছেন।
'জেড আই খান পান্নার লড়াইটা প্রকৃত অর্থে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য। সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি আর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক অগ্রসৈনিক হিসাবেই তিনি দেশের মানুষের কাছে সমাদৃত। তিনি সব সরকারের আমলেই সোচ্চার ছিলেন এবং আছেন। তার সংগ্রাম এ দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করে যাবে নিঃসন্দেহে।'