ছাত্রদের দাবিতে সরকারের সমর্থন আছে কিনা, প্রশ্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন প্রতিনিধি রয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদের করা দাবিগুলোর পেছনে সরকারের সমর্থন রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তাদের মতে, কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে অর্জন বিসর্জনে পরিণত হতে পারে। এক আলোচনা সভায় এনিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদর রহমানসহ বিগত দিনে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলন শরিক বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারা।
আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে 'অন্তর্বর্তী সরকারের ৮০ দিন: গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জসমূহ' শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
সভায় সিলেক্টিভ (বাছাইকৃত) সংস্কার নয়, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র-সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, যেখানে ঐকমত্যে হবে – সেখানে সংস্কার করতে হবে। সিলেক্টিভ কোনো ঐক্যমত্যে হবে না। জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐকমত্যে বিশ্বাসী হতে হবে। প্রত্যেকটি বিষয়ে ঐকমত্যে সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কারের জন্য ১০টি কমিশন করা হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন আসবে। কিন্তু কমিশনগুলোর কার্যকালীন আবার নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। এই দাবির সঙ্গে সংস্কার কমিশন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সমর্থন বা সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা জানা নেই। এ জিনিসগুলো পরিষ্কার করতে হবে। এ বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।
আমীর খসরু বলেন, সংস্কারের দাবি নতুন কিছু নয়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। যেসব বিষয়ে হবে না, সেগুলো নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে আছে। জনগণ ভোট দিতে চায়। এতে কোনো দ্বিমত নেই।
আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে সরকারের ৮০ দিন নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সেখানে বলা হয়, "অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও – তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। গত ৮০ দিনে তাদের নানা বেফাঁস ও আবেগপ্রবণ কথাবার্তায় – তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।"
সাইফুল হক বলেন, সরকারের গঠন করা ১০টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে— রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসায় গোটা সংস্কার এজেন্ডা এই মুহূর্তে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাঁদের তোলা ইস্যুর পেছনে— সরকারের সম্মতি বা সমর্থন আছে কি না, এই প্রশ্ন জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে।
সমাপনী বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য আছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার করবে। বাকি যেগুলোতে দ্বিমত থাকবে, সেসব বিষয়ে নির্বাচিত সরকার এসে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এখন নতুন নতুন দাবিতে বিভাজন বাড়ছে। সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধছে। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে অর্জন-বিসর্জনে পরিণত হতে পারে।
সাইফুল হক বলেন, কোনো নির্বাহী সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় গেলে তাতে হিতে-বিপরীত হয়। ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, সেখানে যার যা শাস্তি, তা নিশ্চিত হবে।
৮০ দিনে সরকারের তিনটি অর্জন দেখতে পাচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সেগুলো হলো – উন্নয়ন সহযোগীরা বড় অর্থসহায়তা দেবেন বলেছেন, দুই মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঋণ শোধ করেছেন, এবং আরব আমিরাতে কারাবন্দি ৫৭ বাংলাদেশিকে মুক্ত করা। তিনি বলেন, সরকার গত ৮০ দিনে এই তিনটি ভালো কাজ করেছে। এর বাইরে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ দেখা যায় না। জনগণের কল্যাণে তারা কোনো সংস্কার করেছে, তার প্রমাণ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচন—এমন মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এজন্য যা যা করা দরকার এবং যত সময় দরকার, তা সবার দেওয়া উচিত।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচির সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলনে, এটি ভালো বার্তা দেয়নি। তাঁরা (আন্দোলনকারীরা) সরকারে থেকেই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, পথ একটাই ন্যূনতম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই সরকার যেন বুঝে, এজেন্ডার বাইরে যেন তারা না যায়।