ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে: ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ
পাবনায় গণধর্ষণের পর গৃহবধূকে থানা চত্বরে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে মামলা দায়েরের পর পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষণের আলামত জব্দ করেছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সদর থানার দাপুনিয়ায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর মামলা না নিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় ব্যাপকভাবে। এরপর পুলিশি তদন্ত শেষে এর সত্যতা পাওয়ার কথা জানান পুলিশ সুপার।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলা দায়েরের পর রাসেল নামের অভিযুক্ত এক ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আলামত জব্দ ও অপরাধস্থল চিহ্নিত করে ঘিরে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃত রাসেলকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ভিকটিমের মামলা না নিয়ে তাকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে শো-কজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হককে।
ঘটনার পূর্বাপর
তিন সন্তানের জননী ভিকটিম নারীর বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামে। ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ চার সহযোগীসহ তাকে অপহরণ করেন। চার দিন আটকে রেখে রাসেল ও তার সহযোগীরা ভিকটিমকে ধর্ষণ করেন। পরে, ৩১ আগস্ট তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে যান ধর্ষকরা। সেখানেও তিন দিন বন্দী রেখে তাকে ধর্ষণ করেন অভিযুক্তরা।
মুক্তি পেয়ে ভিকটিম বাড়ি ফিরে স্বজনদের বিষয়টি জানান। ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
এরপর পুলিশ রাসেলকে আটক করে। কিন্তু পরে অভিযোগকারী নারীকেও থানায় ডেকে নিয়ে রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে। এ অভিযোগ ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর। তিনি জানান, “পুলিশ রাসেলকে আটকের পর থানায় নিয়ে আসে। এরপর ওসির নির্দেশে কাজী ডেকে থানার মধ্যেই আমাদের বিয়ে দেওয়া হয়।”
অন্যদিকে ধর্ষণে অভিযুক্ত রাসেল বলেন, “রিমান্ডে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে পুলিশ জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়েছে। আমি নির্দোষ। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।”
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক সোমবার বিকেলে বলেন, “প্রথমদিকে মেয়েটির কোনো অভিযোগ ছিল না। পরে পরিবারের সম্মতিতে রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। তবে থানায় বিয়ে হয়েছে কিনা এ তথ্য আমার কাছে নেই।”
তবে, সোমবার দুপুরে ভিকটিম নারী রাসেল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে স্বীকার করেছেন সদর থানার ওসি।
এ ঘটনায় সোমবার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হককে শো-কজ নোটিশ পাঠিয়ে থানায় ভিকটিমের মামলা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।