ভারতকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রপ্তানি নীতি পরিবর্তনের আগেই অবহিত করতে বলেছে ঢাকা
আগামী বছর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অর্ধশত বার্ষিকী পালনের যৌথ প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার। এনিয়ে মঙ্গলবার দ্বিপাক্ষিক এক বৈঠকে বাংলাদেশ আবারও বলেছে, এখন থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই- তা যেন ভারত জানিয়ে দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ার পর ঢাকা এ অনুরোধ করেছে। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) যৌথ পরামর্শক কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আব্দুল মোমেন এ সম্পর্কে ভারতীয় পক্ষকে অবহিত করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য অয়্যার- প্রকাশিত এক প্রতিবেদন সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।
চলতি মাসেই আকস্মিকভাবে ভারতের রপ্তানি বন্ধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে একটি চিঠি ইস্যু করে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিনি দেশটির কাছে রপ্তানি নীতিতে পরিবর্তন আনার আগে তা জানানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, সে অনুরোধ আবারও উপেক্ষিত হয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে বিষয়টি আবারও উত্থাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
বৈঠকের পর জারি করা যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ''বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও ভারতীয় পক্ষের কাছে দেশটির সরকারের যেকোনো রপ্তানি নীতিমালা পরিবর্তনের আগে অগ্রিম নোটিশ দেওয়ার অনুরোধ করেছে। বিশেষ স্থানীয় বাজারে যেসব পণ্যের সরবরাহ প্রভাব ফেলে, তাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি সম্পর্কে আগেভাগে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।''
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ অনুরোধের প্রেক্ষিতে ভারতের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি, তবে বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিরা বিষয়টিকে নোট করেন।
এদিকে ভারতের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ। গত সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আসা পেঁয়াজের চালান এসে পৌঁছায়।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আরও প্রাধান্য পায় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রসঙ্গ।
এব্যাপারে যৌথ বিবৃতিটি জানায়, 'উভয়পক্ষই বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানিকে একটি উদ্বেগজনক বিষয় বলে একমত পোষণ করে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করে।'
আন্তর্জাতিক সীমানার অখণ্ডতা রক্ষায় সীমান্ত সংলগ্ন জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করাটাও জরুরি, বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।
''ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের কাছে যৌথ সীমানার সংবেদনশীল জায়গাগুলোতে এক সারির বেড়া নির্মাণে দ্রুত অনুমোদনের অনুরোধ করা হয়েছে। ১৫০ গজের মধ্যে নির্মিত এ বেড়া সীমান্ত অপরাধ কমাবে, বলে জানানো হয়।''
এছাড়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ভারতের প্রতি দেশটির সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নীতির আওতায় বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি প্রদত্ত বৈষম্যহীন সুবিধার আওতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। তিনি জানান, এর সুবিধা নিয়ে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেদেশে পুঁজি লগ্নি করার বাড়তি সুযোগ পাবেন।
''(বাংলাদেশিদের) বিনিয়োগ প্রস্তাব দীর্ঘসূত্রিতার সম্মুখীন হলে, সেক্ষেত্রে ভারতীয় পক্ষ তা দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নেবে'' যৌথ বিবৃতিটি এ আশ্বাসের কথা জানিয়েছে।
এছাড়া, খুব শীঘ্রই মন্ত্রণালয় পর্যায়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে দুই দেশ ঐক্যমত্য পোষণ করেছে। এব্যাপারে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা তিস্তা-সহ আরও ছয়টি নদীর পানি বন্টনের মতো দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর চূড়ান্ত সমাধানের ব্যাপারে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনঃব্যক্ত করেন।
- সূত্র: দ্য অয়্যার