ভেঙে গেল জার্মানীর জোট সরকার, শীঘ্রই হতে পারে নির্বাচন
ভেঙে গেছে 'ট্রাফিক লাইট' খ্যাত জার্মানির তিন দলীয় জোট সরকার। চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনারকে বরখাস্ত করায় ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এফডিপি) সরকার থেকে তাদের সকল মন্ত্রী প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে, যা কার্যত এই জোটের সমাপ্তি ঘটায়।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাতের সঙ্কট বৈঠকের পর শলৎস লিন্ডনারকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন।
মূলত আগামী বছরের বাজেটের বিশাল ঘাটতি পূরণের বিষয়ে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় দ্রুত নির্বাচন আহ্বান জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার। এর প্রেক্ষিতেই তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনার জবাবে এফডিপি'র পার্লামেন্টারি গ্রুপের নেতা ক্রিশ্চিয়ান ডুর শলৎসের সরকার থেকে সকল মন্ত্রী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
তিন দলের এই 'ট্রাফিক লাইট' জোটের মধ্যে রয়েছে- ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এফডিপি), সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) ও গ্রিন পার্টি।
চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভিযোগ করেন, অর্থমন্ত্রী লিন্ডনার প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোর পথে বাধা সৃষ্টি করেছেন, বিশেষ করে ব্যয় সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করতে অনীহা দেখিয়েছেন। এই কারণে ইউক্রেনকে আরও সহায়তা প্রদানের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, সেটিও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, লিন্ডনার পালটা অভিযোগ এনে বলেন, চ্যান্সেলর প্রকৃত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করছেন। লিন্ডনারের ভাষ্যে, "ওলাফ শলৎস আমাদের দেশের জন্য একটি নতুন অর্থনৈতিক জাগরণের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।"
গ্রিন পার্টি এ পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করলেও, বিদ্যমান আংশিক সরকারে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ইইউ এবং বিশেষত জার্মানির পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা প্রদর্শন জরুরি।
"আমাদের মনে হচ্ছে এটি আজ রাতে ঠিকঠাক নয়, প্রায় দুঃখজনক, এমন একটি দিনে যখন ইউরোপে ঐক্য ও কার্যক্ষমতার প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে," বলেছেন উপ-চ্যান্সেলর ও অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেক। বুধবার রাতের এক যৌথ বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও এতে একমত প্রকাশ করেন।
এদিকে, ডানপন্থী বিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (আফডি) এই জোট ভেঙে যাওয়াকে জার্মানির জন্য 'স্বাধীনতার নতুন পথ' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
আফডি'র সংসদীয় নেতা এলিস ওয়েইডেল ও টিনো ক্রুপ্পাল্লা এক বিবৃতিতে বলেন, "মাসের পর মাসের অচলাবস্থা এবং স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতির পর, জার্মানি এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এখন জরুরি একটি নতুন রাজনৈতিক সূচনা প্রয়োজন"।
শলৎস ঘোষণা করেছেন যে, আগামী ১৫ জানুয়ারি সংসদে আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জার্মান সংবিধান অনুযায়ী, যদি শলৎস যথেষ্ট সমর্থন না পান, তবে তিনি রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানাতে পারেন, যা আগামী মার্চ ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন