চালের শুল্ক প্রত্যাহারেও আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১০ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও মাত্র সাড়ে নয় হাজার মেট্রিক টনের ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান জানান, আমদানির ওপর থাকা ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক-কর প্রত্যাহারের পরও বেসরকারি খাতে চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে খাদ্য ভবনে আমন সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে মূল বক্তব্য দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
আলী ইমাম মজুমদার জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম চড়া হওয়ায় সরকার মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। তাদেরকে চালের দাম কমানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, 'আমরা ১৩০ জন ব্যবসায়ীকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু ১০.৫২ লাখ মেট্রিক টন আমদানির অনুমতির বিপরীতে মাত্র ৯.৫ হাজার মেট্রিক টনের এলসি [ঋণপত্র] খোলা হয়েছে।'
এসব এলসির মাধ্যমে কেনা চাল ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববাজারে চালের বাড়তি দামের প্রেক্ষাপটে গত ২৯ অক্টোবর ট্যারিফ কমিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করে।
এরপর ৩১ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সিদ্ধ ও আতপ চালের ওপর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারপর খাদ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি খাতে চাল আমদানির জন্য ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে।
তবে নির্ধারিত সময়ে ব্যবসায়ীরা অনুমতি নিলেও আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে ধান কাটার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বাজারে নতুন ধান এলে চালের দাম কিছুটা কমে আসতে পারে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা এখন চাল আমদানিতে আগ্রহী নয়।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, 'ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চালের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রথমে জানিয়েছিল, ১০ লাখ টন উৎপাদন কমবে, পরে তারা জানিয়েছে যে এটি ৬–৭ লাখ টন হতে পারে। তাই আমরা দ্রুত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'উৎপাদন খরচ বেড়েছে, তাই কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পান, সে জন্য আমরা ধানের সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়েছি। আগামী রোববার থেকে উত্তরাঞ্চলে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু হবে।'
এছাড়া খাদ্য মজুত সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বর্তমানে সরকারি মজুত ১২.৮৮ লাখ মেট্রিক টন; এর মধ্যে গম রয়েছে ৪.৩৯ লাখ মেট্রিক টন এবং বাকিটা চাল।'
চাল ও খাদ্যের বাড়তি দাম নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, 'আমি নিজেও মধ্যবিত্ত, বাজারে যাই, আমিও চাপে আছি। কারণ গত বন্যায় অনেক শীতকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'