ট্রাম্পের নেতৃত্বে দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি হবে: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা করছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ 'অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্রুত' শেষ হবে। খবর বিবিসি'র।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম সাসপিলনেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, 'এই যুদ্ধ ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস দলের নীতির কারণে দ্রুত শেষ হবে। এটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের নাগরিকদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সবকিছু করতে হবে যাতে এই যুদ্ধ আগামী বছর শেষ হয়, কূটনৈতিক উপায়ে শেষ হয়।'
জেলেনস্কি সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি টেলিফোন আলোচনার উল্লেখ করে বলেন, তাদের মধ্যে একটি 'গঠনমূলক মতবিনিময়' হয়েছে। তবে ট্রাম্প কোনো বিশেষ শর্ত বা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু জানাননি।
ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তার অগ্রাধিকার যুদ্ধ শেষ করা এবং ইউক্রেনে সামরিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের 'অতিরিক্ত ব্যয়' রোধ করা। মার্কিন কংগ্রেস এ বছর ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, যা ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সহায়তা।
তবে মার্কিনিদের, বিশেষ করে রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার প্রতি সমর্থন কমে আসছে। ট্রাম্প তার প্রচারণায় যুদ্ধ একদিনেই শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেননি।
যুদ্ধক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা
২০২৩ সালে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে না পারায় যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন স্থবির হয়ে আছে। রাশিয়ার সেনারা পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে পাল্টা অভিযান চালিয়ে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রুশ ভূখণ্ড দখল করেছে। জেলেনস্কি বলেছেন, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য রুশ সেনাদের ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন থেকে সরানো। তবে এর সফলতা এখনও অস্পষ্ট।
বিশ্লেষকদের মতে, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের দখল ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হতে পারে। জেলেনস্কির 'বিজয় পরিকল্পনা' অনুযায়ী, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে কোনো বাফার জোন তৈরি করা এড়াতে এই আক্রমণ চালানো হচ্ছে।
শান্তি আলোচনার দিকে নজর
যুদ্ধ ক্লান্তি এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের অবনতির প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর নতুন করে জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে জেলেনস্কি কোনো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড, এমনকি ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলে যাওয়া ক্রিমিয়া, ছাড় দিতে রাজি নন।
ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির সম্পর্ক বরাবরই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। ট্রাম্প ২০১৯ সালে জেলেনস্কিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিবারের বিরুদ্ধে তথ্য খুঁজে বের করতে চাপ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
ডেমোক্র্যাটদের দাবি, ট্রাম্পের যুদ্ধনীতি ইউক্রেনের জন্য ক্ষতিকর এবং ইউরোপের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তবে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধবিষয়ক অবস্থান 'ধারণার চেয়ে বেশি সংযত'।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন