কিয়েভে নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে আঘাত হানার হুমকি পুতিনের
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের যেসব কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, সেখানে নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল 'ওরেশনিক' দিয়ে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিন। খবর বিবিসি'র।
রাতভর ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় রাশিয়ার ব্যাপক হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই পুতিন এই মন্তব্য করেছেন। তিনি এই আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহকৃত অ্যাটাকামস মিসাইল দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে 'নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণের' প্রতিক্রিয়া বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, যেকোনো ধরনের 'রুশ ব্ল্যাকমেইল' কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো মার্কিন ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহকৃত অ্যাটাকামস ও স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে আক্রমণ চালায়। রাতভর রাশিয়ার ড্রোন ও মিসাইল হামলায় ইউক্রেনজুড়ে বিস্ফোরণ ঘটে, যা এ মাসে দ্বিতীয়বারের মতো এমন বড় আক্রমণ।
এই হামলায় কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও ১০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বেসামরিক জনগণ ও জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার অত্যন্ত বিপজ্জনক অস্ত্র ক্লাস্টার ওয়ারহেড ব্যবহার করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এই হামলায় ৯০টি মিসাইল ও ১০০টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ছিল 'ওরেশনিক' নামে একটি নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল। পুতিনের দাবি, এই মিসাইল প্রতিহত করা সম্ভব নয়।
তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়ার এই পরীক্ষামূলক ওরেশনিক মিসাইলের সংখ্যা সীমিত এবং আরও উৎপাদনে সময় লাগবে।
জেলেনস্কি তার বক্তব্যে আরও বলেছেন, পুতিনের লক্ষ্য এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো নয়, বরং অন্যদের যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করা। তিনি বলেন, 'এখনকার এই উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে রাশিয়ার শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করার চাপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।'
পুতিন জানিয়েছেন, মস্কো কখনোই ইউক্রেনকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে দেবে না। যদি ইউক্রেন তা অর্জন করে, তবে রাশিয়া তার সব ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করবে। রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ এ তথ্য জানায়।
ধারণা করা হচ্ছে, পুতিনের এই বক্তব্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে ইঙ্গিত করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অজ্ঞাতপরিচয় পশ্চিমা কর্মকর্তারা ইউক্রেনকে পরমাণু অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার আগে হতে পারে।
জেলেনস্কি বারবার অভিযোগ করেছেন যে ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট স্মারকলিপি, যার মাধ্যমে ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করেছিল, দেশটিকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়ার হামলায় ওডেসা, খারকিভ এবং লুটস্কসহ একাধিক শহরে বিস্ফোরণ ঘটে।
কিয়েভও হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল, তবে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর উদ্দেশ্যে নিক্ষিপ্ত সব মিসাইল প্রতিহত করা হয়েছে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, এই হামলা প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টা ধরে চলে।
রিভনে প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সান্দ্র কোভাল জানিয়েছেন, পশ্চিমাঞ্চলে ২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। লভিভ অঞ্চলে ৫ লাখ ২৩ হাজারের মতো বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক প্রধান ম্যাকসিম কোজিটস্কি। খেরসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে কয়েক দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ দেশের গ্রিডে ক্ষতিকর ওভারলোড এড়াতে পূর্ব সতর্কতামূলক জরুরি বিদ্যুৎ বিভ্রাট কার্যকর করেছে।
পুতিন স্পষ্ট করেছেন, রাশিয়া কখনোই ইউক্রেনকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে দেবে না। যদি ইউক্রেন তা অর্জন করে, তবে রাশিয়া যেকোনো ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করবে।
তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা শীতকালে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বড় হামলার আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল মজুত করছে জ্বালানি অবকাঠামোয় আঘাত হানার জন্য।