‘ব্যবহার করবই’—১৬ বছরের কম বয়সিদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধের পর অস্ট্রেলিয়ার শিশুর প্রতিজ্ঞা
১৬ বছরের কম বয়সি শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া। সরকারের এই পদক্ষেপে দেশটিতে ক্ষোভ ও স্বস্তির মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে টিকটকসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি জায়ান্ট বলছে, এ নিষেধাজ্ঞা শিশুদেরকে 'ইন্টারনেটের অন্ধকার কোণে' ঠেলে দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার দীর্ঘ বিতর্কের পর সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের আইনটি পাশ হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
আইন অনুযায়ী, ফেসবুক ও টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে, অপ্রাপ্তবয়স্করা যেন তাদের সাইটে প্রবেশ করতে না পারে। এ আইন লঙ্ঘন করলে ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার—প্রায় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার—পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আইনটি বাস্তবায়ন শুরু হবে। এক বছরের মধ্যে নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, 'আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন প্ল্যাটফর্মগুলোর সামাজিক দায়িত্ব।'
এ মাসের শুরুর দিকে আলবানিজ বলেছিলেন, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে শরীরের গঠন নিয়ে ভুল ধারণা এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে নারীবিদ্বেষী বিষয়বস্তু বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।
তবে সিডনিতে শুক্রবার এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সিডনির বাসিন্দা ফ্রান্সেসকা স্যাম্বাস রয়টার্সকে বলেন, 'আমি মনে করি এটি দারুণ উদ্যোগ। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়া ঠিক শিশুদের জন্য সঠিক জায়গা নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুদের অনেক সময় এমন কিছু দেখতে হয়, যা তাদের জন্য উপযুক্ত নয়।'
তবে অনেকেই এ পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
৫৮ বছর বয়সি শন ক্লস বলেন, 'আমি ভীষণ ক্ষুব্ধ। আমি মনে করি, এই সরকার গণতন্ত্রকে অগ্রাহ্য করছে। …ওরা এমন নিয়ম আর আইন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয় কেমন করে?'
এদিকে শিশুরা বলছে, তারা এই নিষেধাজ্ঞার ফাঁকফোকর খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।
১১ বছর বয়সি এমা ওয়েকফিল্ড বলে, 'আমি মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবই, তবে গোপনে।'
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, যেমন ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়া শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার আইনে শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধই করে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের লেবার পার্টি এই বিলটি সংসদে দ্রুত পাশ করার জন্য বিরোধী দলের সমর্থন পায়। বিলটি পাসের আগে বছরের শুরুতে একটি সংসদীয় তদন্ত হয়। সেখানে সাইবার বুলিংয়ের কারণে আত্মহত্যার শিকার শিশুদের অভিভাবকদের সাক্ষ্য শোনা হয়।
তবে এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা। কিছু আইনজীবী বলছেন, যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করেই এ আইন পাশ করা হয়েছে।
টিকটকের একজন মুখপাত্র বলেন, শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হয়েছে। এতে শিশুরা আরও বড় বিপদের মুখে পড়তে পারে।
টিকটকের মুখপাত্রের দাবি, অস্ট্রেলিয়া সরকার অনেক মানসিক স্বাস্থ্য ও অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আমলে নেয়নি।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বলেছেন, আইনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, '১৮ বছরের কম বয়সিদের মদ্যপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা যেমন শতভাগ কার্যকর নয়, তেমনি এই আইনও হয়তো পুরোপুরি কার্যকর হবে না। কিন্তু আমরা জানি, কাজটি সঠিক।'
এ নিষেধাজ্ঞা অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এক্সের (সাবেক টুইটার) মালিক ইলন মাস্ক এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি 'সব অস্ট্রেলিয়ানের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের একটি গোপন উপায়'।
অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে তাদের কনটেন্ট শেয়ারের জন্য মিডিয়া আউটলেটকে রয়্যালটি প্রদানে বাধ্য করেছে। এ ছাড়া জালিয়াতি ব্যর্থ হলে প্ল্যাটফর্মগুলোকে জরিমানার মুখোমুখি করার পরিকল্পনা করছে।