ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই বারবার ড্যাপ সংশোধন করছে রাজউক: নগর পরিকল্পনাবিদরা
সম্প্রতি ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)- এর যে সকল সংশোধনীর প্রস্তাব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকাশ করেছে— সেখানে শহরের বাসযোগ্যতা, ধারণক্ষমতা, নাগরিক সুবিধাদি, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব না পেয়ে বরং, আবাসন ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক স্বার্থ গুরুত্ব পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
ব্যবসায়ী ও স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) চূড়ান্ত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে দুইবার সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হল।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পর্যালোচনা বিষয়ক এক অনলাইন অনুষ্ঠানে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, 'কোন স্বার্থে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর বারংবার সংশোধনের উদ্যোগ: আইপিডি'র পর্যবেক্ষণ'।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আইপিডি'র পক্ষ থেকে পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপ সংশোধনে রাজউকের সংশোধনীতে ভবনের আকার-উচ্চতা বাড়ানোর প্রস্তাবনা ছাড়া অন্য কিছু আসেনি। বন্যা প্রবাহ এলাকা, জলাভূমি, কৃষিজমি রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষায় থেকেছে।
"আমরা বলে এসেছিলাম, আবাসন ব্যবসায়ী ও কিছুসংখ্যক পেশাজীবীরা ড্যাপ বাতিল বা স্থগিতের আবেদন করছে শুধুমাত্র ভবন নির্মাণে বেশি এফএআর (ফার) মান বাড়ানোর জন্যেই। আমাদের সেই শঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ড্যাপ সংশোধনে প্রস্তাবিত এরিয়া ফার ও ব্লকভিত্তিক ফার মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাসযোগ্য শহর নির্মাণে পরিকল্পনার ব্যকরণ অনুসরণ করা হয়নি। ফলে ড্যাপে প্রস্তাবিত সংশোধনীসমূহ ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে," যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আইপিডির অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, "একটি বসবাসযোগ্য শহরে শুধু আবাসন নয়; পরিবেশ, প্রতিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণপরিবহন ইত্যাদি বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়ার কথা। অথচ আমাদের ব্যবসায়ী মহল কেবল ড্যাপ বাতিল এবং ফার বৃদ্ধির কথাই বলছে। এমনকি ফার বৃদ্ধি করা হলে ভবিষ্যতে ওই এলাকা বসবাসযোগ্য থাকবে কিনা, তা নিয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। রাজউকের নীতিনির্ধারক মহলের অনেকেই নগর পরিকল্পনার গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারায় স্বার্থান্বেষী মহলের অন্যায় আবদারের কাছে নতি স্বীকার করছেন। গোষ্ঠীস্বার্থ চিন্তা না করে ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়াতে জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, "একটি শহরের ধারণ ক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনার সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের কেবলমাত্র মুনাফা লাভের চিন্তা শহরের উন্নয়নের অন্তরায়। ফার এর মান ৩ এর বেশি হলে ওই এলাকায় কী প্রভাব পড়বে বা রাস্তাগুলো কতটুকু কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে গবেষণা করা উচিৎ।"
এদিকে, পরিকল্পনাবিদ সাজিদ ইকবাল বিলেন, "শুধু ফার এর মানকে বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়িক লাভ ক্ষতির হিসেব করে সম্পূর্ণ ড্যাপ বাতিলের প্রস্তাব দুঃখজনক।"
তিনি নগর পরিকল্পনায় দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসইয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, "ব্যবসায়ীক স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে সকল অংশীদারদের যৌক্তিক পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে ড্যাপ পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং পরিবর্ধনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"