বাংলাদেশি রোগীদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হবে না: কলকাতার চিকিৎসকরা
কলকাতার হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা বাংলাদেশি রোগীদের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাদের অনেকেই জোর দিয়ে বলেছেন, তারা আগের মতোই বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেবেন।
গত সপ্তাহের শুরুতে কলকাতার মানিকতলার জেএন রায় হাসপাতাল ঘোষণা করেছিল, প্রতিবেশী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে 'ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা' করার প্রতিবাদ স্বরূপ তারা কোনো বাংলাদেশি রোগীর চিকিৎসা করবে না।
উল্লেখ্য, কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর বিজেপি নেতা সজল ঘোষ এই হাসপাতালের অন্যতম ডিরেক্টর।
কলকাতার হাসপাতাল ঘোষণার পর ত্রিপুরার দুটি হাসপাতালও একই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে।
এ অবস্থায় ভারতের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক বাংলাদেশি রোগীদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা তাদের কাছে গিয়ে চিকিৎসা বঞ্চিত হবেন না।
পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, 'আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের সঙ্গে বৈষম্য করব না।'
একইভাবে আরএন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ড. দীপক শংকর রায় বলেন, 'সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে দৈনিক রোগীর সংখ্যা ২০ থেকে কমে ৫ জনে নেমে এসেছে।'
তিনি বলেন, 'ভিসা ও ভ্রমণ জটিলতার কারণে কম রোগী আসছেন। ডাক্তার হিসেবে আমরা রোগীদের সমাজ, ধর্ম বা জাতীয়তা দেখি না। আমাদের কাছে সবাই সমান। আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা আমরা অব্যাহত রাখব।'
কলকাতার আনন্দপুরের ফোর্টিস হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক ও হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন কেএম মন্দানা বলেছেন, 'বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, তারা কলকাতাকে তাদের দ্বিতীয় বাড়ি মনে করেন।'
তিনি বলেন, 'কলকাতার চিকিৎসকদের সঙ্গে বাংলাদেশি রোগীদের সম্পর্ক বহু বছরের, বর্তমান অস্থিরতা এই সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। প্রকৃতপক্ষে, অনেক রোগী চিকিত্সার জন্য আসতে পারছেন না বলে আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ কিছু রোগ দ্রুত খারাপ আকার ধারণ করতে পারে।'
ভিসা জটিলতার কারণে কিছু হাসপাতাল অনলাইনে পরামর্শ সেবা দেওয়াও শুরু করেছে।
পিয়ারলেস হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের প্রধান ড. অজয় সরকার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, 'যদিও এই বিষয়গুলো রাজনৈতিক; তবে পেশাগতভাবে আমরা শপথ নিয়েছি যে সব রোগীকে, বাংলাদেশের রোগীসহ, সমানভাবে চিকিৎসা দেবো।'
কলকাতার সব হাসপাতালেই বাংলাদেশি রোগী আসে, তবে হিন্দু রোগীর চেয়ে মুসলিম রোগী বেশি আসে।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং ভারতে পালিয়েযাওয়ার পর ক্রমে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
এদিকে, আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এই বৈঠকে অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি ঢাকায় আসতে পারেন।