সিরিয়ায় সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূরে থাকা উচিত: ট্রাম্প
সিরিয়ায় সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর দূরে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, 'এটা আমাদের লড়াই নয়।'
সিরিয়ান বিদ্রোহীরা গত মাসের শেষ থেকে এবারের আক্রমণ শুরু করার পর, প্রথমবার এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প তার পোস্টে বলেন, 'আসাদ ক্ষমতায় থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়ার যোগ্য নন।'
তিনি বলেছেন, রাশিয়া 'ইউক্রেনে এতটাই জড়িয়ে পড়েছে', যে দেশটিকে তারা এত বছর ধরে সুরক্ষা দিয়ে এসেছে, সেই 'সিরিয়ায় এই সহজ বিদ্রোহ থামাতেও তারা অক্ষম বলে মনে হচ্ছে'।
যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে তিনি এও বলেন, আসাদ ও রুশ বাহিনীকে পরাস্ত করাটা হয়তো ভালই হবে।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'সিরিয়ার অবস্থা জগাখিচুড়ি, তবে দেশটি আমাদের বন্ধু নয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের এর বিষয়ে কিছুই করার নেই। এটি আমাদের লড়াই নয়। বিষয়টি তাদের ওপরই ছেড়ে দিন। এর সঙ্গে জড়াবেন না!'
প্রসঙ্গত, সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। বিস্ময়করভাবে পতন হয়েছে রাশিয়ান ও ইরানের মিত্র প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সরকারি বাহিনীর। এমনকি প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন।
আজ রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর দুই সিনিয়র কর্মকর্তা। এরপর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে দামেস্ক ছাড়লেও তিনি কোথায় গেছেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার পালাবদলের এই মুহূর্তটি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিশ্বনেতারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলেছেন, 'বাইডেন প্রশাসনের [সিরিয়ায়] হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা নেই।'
ক্যালিফোর্নিয়ায় এক অনুষ্ঠানে সুলিভান বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ... সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সামরিকভাবে জড়াবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে যাতে ইসলামিক স্টেট (আইএস) যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারে।'
আসাদকে উৎখাতের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে ১৩ বছর ধরে চলা যুদ্ধে আসাদ সরকার রাশিয়া ও ইরানের সামরিক বাহিনী, হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য ইরানি মিলিশিয়াদের সমর্থন পেয়েছে। আসাদ পরিবারের শাসনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ বিদ্রোহ হিসেবে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে অর্ধ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়েছে, সিরিয়া দেশটি বিভক্ত হয়ে গেছে এবং এতে একাধিক বিদেশি সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া জড়িয়ে পড়েছে।
আসাদের যুদ্ধ পরিচালনার নৃশংসতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র শুরুতেই সিরিয়ায় তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হায়াত তাহরির আল-শাম। যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং দাবি করছে আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও, এই গোষ্ঠীটি পরে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
এ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা সিরিয়ান সেনাবাহিনী, রাশিয়ান ও ইরানী সেনাবাহিনী বা দেশটির মিত্র মিলিশিয়ার পক্ষ থেকে শক্তিশালী কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি।
বাইডেন প্রশাসন বলেছে, সিরিয়ান বিরোধী বাহিনীর সরকার নিয়ন্ত্রিত শহরগুলো সহজে দখল নেওয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রাশিয়ার ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং ইরান ও ইরানি মিলিশিয়ার গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের শক্তি কমে গেছে।
শনিবার সিমি ভ্যালিতে রোনাল্ড রিগ্যান প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা কোম্পানি ও আইনপ্রণেতাদের বার্ষিক সমাবেশে সুলিভান বলেন, 'আসাদের সমর্থক' ইরান, রাশিয়া ও হিজবুল্লাহ- সবাই দুর্বল ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে তারা আসাদকে যে ধরনের সমর্থন দিয়েছে, এখন কেউই আর তেমন সমর্থন দিতে প্রস্তুত নয়।
সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০০ সেনা রয়েছে। আইএসের পুনরুত্থান ঠেকাতে মার্কিন বাহিনীও কুর্দি মিত্রদের সঙ্গে মিলে বিরোধী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল অপারেশনস কমান্ডের প্রধান জেনারেল ব্রায়ান ফেন্টন বলেছেন, 'সিরিয়ার অভ্যুত্থান দেশটিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে তিনি আগাম মন্তব্য করতে চাই না।'
তিনি বলেন, 'এখনই কিছু বলার সময় আসেনি।'
রিগ্যান ইভেন্টে একটি প্যানেলে ফেন্টন বলেন, 'তবে এটুকু বলতে পারি, সিরিয়ায় আইএসের উত্থান ব্যাহত করার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সুরক্ষার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের পরিবর্তিত হবে না।'
সিরিয়ার বিরোধীদলীয় কর্মী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে, আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
ট্রাম্পের ডিফেন্স ট্রানজিশন চিফ এবং ভেটেরান্স বিষয়ক বিভাগের সাবেক সচিব রবার্ট উইলকি ক্যালিফোর্নিয়ার একই অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'খুনি আসাদ সরকারের' পতন ইরানের শক্তির জন্য একটি বড় আঘাত হবে।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি