নাফ নদের মিয়ানমার অংশে নিষেধাজ্ঞা আরাকান আর্মির, বাংলাদেশ অংশে বিজিবির টহল জোরদার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নাফ নদের আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অংশে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
টানা ছয় মাস তীব্র লড়াইয়ের পর সর্বশেষ রবিবার (৮ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি দখলের মধ্যে দিয়ে এই জেলা শহরটির শতভাগ নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে আরাকান আর্মি। ওই বিবৃতিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি সফলভাবে রাখাইন রাজ্যের মংডু অঞ্চলের সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশনের (৫ নম্বর) শেষ অবশিষ্ট ফাঁড়িটির নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এতে সামরিক জান্তার সশস্ত্র সদস্য, তাদের সহযোগী আরএসও, আরসা, এআরএ সদস্যরা এখনও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা অতর্কিত হামলা অব্যাহত রেখেছে, মংডু অঞ্চলের অন্যান্য অংশেও এমন হামলা হচ্ছে। তাই সামরিক প্রয়োজনীয়তা এবং জননিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে নাফ নদীতে (রাখাইন প্রান্তে) সমস্ত নদী পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে জান্তা বাহিনীর একজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুনকে আটক করা হয়েছে। থুরিন ছিলেন রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ১৫ নং অপারেশন কম্যান্ডের অধিনায়ক। এছাড়া, জান্তার সেনা ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৮০ জন যোদ্ধাকে আটক করেছে বিদ্রোহীরা।
এদিকে, নাফনদীর বাংলাদেশ অংশে টহল জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ।
সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, 'মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তের নাফনদীতে টহল তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার টেকনাফ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ বিআরএম-৬ হতে বিআরএম-১০ পর্যন্ত নাফ নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সমূহে এবং বাংলাদেশের জলসীমায় বিদ্যমান দ্বীপের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নৌ টহল পরিচালনা করা হয়।'
আরও জানানো হয়, 'সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বিজিবি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা জলে ও স্থলে টহল পরিচালনা করা হচ্ছে ও সোচ্চার রয়েছে। এছাড়া সীমান্তের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়ও রয়েছে।'
এদিকে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্ত এলাকার মানুষ নতুন করে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাননি।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম 'দ্য ইরাবতী'র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত অঞ্চলের মংডু শহর পুরোটাই আরাকান আর্মির দখলে গেছে।
ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্ত এলাকার তিনটি টাইনশিপ – মংডু, বুথিডং ও পালেতাওয়া দখলের নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। মংডু ও বুথিডং বরাবর বাংলাদেশের সীমান্ত, আর পালেতাওয়ার সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে।