দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না: নাহিদের বক্তব্যের সমালোচনায় ফখরুল
'রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে' তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না।'
আজ শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'গত ১৫ বছর একাত্তরের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, এখন যেন আবার ইতিহাস বিকৃত করা না হয়। একনায়কতন্ত্রের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য স্বৈরাচারেরা মেধাবী মানুষগুলো সরিয়ে দিতে চায়। সেটি করেছিল পাকিস্তান, ১৯৭১ সালে।'
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'উনি কেন, কি বোঝাতে চাচ্ছেন জানি না। গভীরতা কি, জানি না। এ সরকারকে তো আমরা সবাই মিলে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। জনগণ সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপির সমর্থন দিচ্ছে। তাদের কাজ একটা পরিবেশ তৈরি করা।'
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও তা প্রত্যাহারে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, 'দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। প্রতিটি কথা মেপে বলা দরকার। এমন কথা বলবেন না, যাতে পতিতরা সুযোগ পেয়ে যায়। তারা যেন ফিরে আসতে না পারে সেজন্য ঐক্য ও মেধা দিয়ে কাজ করতে হবে।'
মির্জা ফখরুল আবার বলেন, 'উনি (তথ্য উপদেষ্টা) যদি না বুঝে বলে থাকেন, তাতে কোনো মত নেই। তবে যদি বুঝে বলে থাকেন, সেটি প্রত্যাহার করতে হবে।'
নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, 'শুধু স্লোগান দিয়ে জেতা যাবে না। জিততে হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে জিততে হবে। কারণ পতিতরা সোশ্যাল মিডিয়া প্রোপাগান্ডা চালিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা ১৫ বছর লড়াই করেছি, আর ছেলেরা দুই মাসে কি এমন অলৌকিক শক্তি পেয়েছিল? স্বৈরাচার পালাতে বাধ্য হলো। এ শক্তি হলো কথা ও সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যক্রম।
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য ভয় পাইয়ে দিতে তরুণ ও বুদ্ধিজীবীদের আয়নাঘরে নিয়েছিল। একে মারে, একে ধরে। এটা হতে দেওয়া যায় না। গণতন্ত্র হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা।'
নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা মনে করেছেন হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেষ। না। আমাদের সামনে আরও বেশি কাজ। নির্বাচনে শেষ হলেই কাজ শেষ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত কাজ করতে হবে।'
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। এদেশের মানুষ ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা পেলে সরকার পরিবর্তন করতে পারে। মানুষ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক মুক্তি।'
তিনি বলেন, 'অন্তর্বতী সরকার যে বার্তা দিয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকারের জন্য খারাপ, জনগণের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে নির্বাচনকে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, 'পাকিস্তানিরা যখন আর আমাদের কন্ট্রোল করতে পারছিল না, তখন তারা এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং তা বাস্তবায়ন করে। ২৪-এ বিজয়ের আগে কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করা হয়নি। তবে উদীয়মান বুদ্ধিজীবী তরুণদের হত্যা করে পালিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা।' তিনি তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মাহমুদ হাসান, শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)