তেল, গ্যাস ও সার আমদানিতে আগামী অর্থবছরে ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে আইটিএফসি
২০২৫-২৬ অর্থবছরে পেট্রোলিয়াম, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও সার আমদানির জন্য বাংলাদেশকে ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গ্রুপের সদস্য ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি)।
মোট ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) পেট্রোলিয়াম আমদানির জন্য ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার এবং এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলা ৬০০ মিলিয়ন ডলার পাবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও প্রথমবারের মতো সার আমদানির জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে। তবে চাহিদা থাকলে সার আমদানিতে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়ার সুযোগও থাকবে।
গত ১৪ ডিসেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় আইটিএফসি ও ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই ঋণচুক্তি চূড়ান্ত হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ও এলএনজি আমদানি করতে বাংলাদেশের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইটিএফসি। এর মধ্যে ১.৬ বিলিয়ন ডলার বিপিসি ও ৫০০ মিলিয়ন ডলার পেট্রোবাংলার জন্য বরাদ্দ করা হয়। এই ঋণের ওপর ছয় মাসের সোফর (সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট) হারের সঙ্গে আরও ১.৮০ শতাংশ সুদ এবং ০.২ শতাংশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফি ধরা হয়েছিল।
২০১২ সালে অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য নেওয়া ২.৬ বিলিয়ন ডলারের পর এটিই ছিল সবচেয়ে বড় অঙ্কের ঋণ। বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে এ ঋণ দিয়েছিল আইটিএফসি।
১৯৭৭ সাল থেকে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ওই বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিপিসিকে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া শুরু করে।
২০০৮ সালে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ট্রেড ফাইন্যান্সিং শাখার মাধ্যমে এই সহায়তা দেওয়া শুরু হয়।
২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইটিএফসি একাই ১৮.২৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও আইটিএফসির সম্মিলিত আর্থিক সহায়তার পরিমাণ প্রায় ২২.৫৮ বিলিয়ন ডলার।
প্রথমবারের মতো সার আমদানির জন্য ঋণ দিচ্ছে আইটিএফসি
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, তেল ও গ্যাসে আইটিএফসি বাংলাদেশকে ধারবাহিক ঋণ দিয়ে এলেও এই প্রথমবারের মতো সার আমদানির জন্য ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। তেল ও গ্যাসের মোট ২.২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ হবে ছয় মাস মেয়াদি। আর সারের আমদানির জন্য দেওয়া ঋণের মেয়াদ হবে ১২ মাস পর্যন্ত।
কর্মকর্তারা জানান, জেদ্দায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনায় সুদহারের শর্তে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। সারের ঋণের জন্য বার্ষিক ঋণের মার্জিন হবে সোফর রেটের সঙ্গে আরও ১.৭৫ শতাংশ। জ্বালানির ঋণের বার্ষিক সুদহার হবে সোফর রেটের সঙ্গে আরও ১.৭৫ শতাংশ।
সার আমদানিতে বার্ষিক ভর্তুকি দিয়ে থাকে বাংলাদেশ। এই ভর্তুকি ছাড়া বিপিসির মতো শর্তে আইটিএফসির ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি নেওয়া হলে প্রতি ছয় মাস পরপর ঋণের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।
এ বিষয়টি বিবেচনা করে আইটিএফসি সারের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এক বছর করতে সম্মত হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে ইআরডিতে নভেম্বরে সার আমদানির বিষয়ক এক সভায় ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে পরে এই চাহিদা কমিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলার করা হয় এবং এই পরিমাণ ঋণের প্রস্তাব জেদ্দায় আইটিএফসির কাছে উপস্থাপন করা হয়।
এই ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আইটিএফসি এবং প্রয়োজনে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার সুযোগ থাকবে।
সারের আমদানি মূলত প্রধানত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ও বেসরকারি খাতের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ মূলত সৌদি আরব, মরক্কো ও তিউনিসিয়া থেকে সার আমদানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।