জুলাই ঘোষণাপত্র: প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি
জুলাই ঘোষণাপত্রের ওপর আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত বৈঠকে অংশ নেবে কি না, সে বিষয়ে বিএনপি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সকালে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যমুনা টিভি।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বরাত দিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি বৈঠকে অংশ নেবে না। ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ফখরুল এই মন্তব্য করেন।
এর আগে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বৈঠকের আয়োজনের তথ্য জানানো হয়।
প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সর্বদলীয় এই বৈঠকটি আয়োজন করবে।
আর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৈঠক আয়োজনের বিষয়টি জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মাহফুজ আলম বলেন, "আমরা বিএনপি, জামায়াত, গণসংহতি আন্দোলন-সহ জুলাই আন্দোলনের সাথে থাকা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা অধিকাংশ পয়েন্টেই একমত। কিছু বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। আমাদের বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে ঘোষণার তারিখ এবং ঘোষণাপত্রে কী কী থাকবে সেটি জানানো হবে।"
তিনি বলেন, "সরকার ঘোষণাপত্র দেবে না, জুলাই আন্দোলনে ছাত্ররা যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনের ফলাফল নিয়ে এসেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রও ছাত্ররা ঘোষণা করবে, এবং আমরা সবাই সাথে থাকব।"
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। কিন্তু এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয় ও বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনাও হয়।
রাজনৈতিক মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে ঘোষণাপত্রের উদ্দেশ্য নিয়ে। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানায়, সরকার এ উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত নয়, এবং সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজ উদ্যোগে ঘোষণাপত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৈঠকে কারা যাচ্ছে, কারা যাচ্ছে না?
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অংশ নেওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।
বিভিন্ন দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকে কোনো দল অংশ নিচ্ছে, কোনো দল নিচ্ছে না, আবার কেউ কেউ এখনও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। দলীয় বৈঠকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকে অংশ নেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
দলটির গণমাধ্যমবিষয়ক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, "গতকাল আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা অংশগ্রহণ করবো। ইসলামী আন্দোলন থেকে একজনকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।"
বৈঠকে অংশ নিচ্ছে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টও।
এনডিএম'র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ টিবিএসকে বলেন, "আমরা উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের থেকে একটি দাওয়াত পেয়েছি। জুলাই প্রক্লেমেশন এর জন্য আলোচনা করবেন এমনটি উল্লেখ করে ডেকেছেন। আর বিস্তারিত কোন কিছু বলা হয়নি।"
"তবে যেহেতু ডেকেছেন আমার দল থেকে একজন প্রতিনিধি যাবেন আলোচনা শুনতে," বলেন তিনি।
অন্যদিকে, দাওয়াতের বিষয়টি স্পষ্ট নয় উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে ১২–দলীয় জোট অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলের মুখপাত্র শাহদাত হোসেন সেলিম।
টিবিএসকে তিনি বলেছেন, "আমরা আজকে মিটিংয়ে যাচ্ছি না, কারণ দাওয়াতের বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা আজ বিকাল ৪টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবো।"
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অংশ নেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় গণতন্ত্র মঞ্চ।
দলটির সমন্বয়ক কে হাসনাত কাইয়ুম টিবিএসকে বলেন, "গণতন্ত্র মঞ্চ আজকের বৈঠকে যাবে কি না, সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দলীয় মিটিং চলছে। মিটিং শেষে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।"
বৈঠকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে একই অবস্থান প্রকাশ করেছে কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (সিপিবি)।
দাওয়াতের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিপিবি মহাসচিব রুহিন হোসন বলেন, "আমরা ভালোমতো দাওয়াত পাইনি। শুনেছি উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি খুদেবার্তায় দাওয়াত পাঠানো হয়েছে। সেখানে নাকি একজনকে যেতে বলা হয়েছে।"
"আমরা এখনো জানিনা আমরা যাব কিনা। আমরা দলের লোকজন বসে সিদ্ধান্ত নেব, তারপর এ বিষয়ে বলতে পারব," যোগ করেন রুহিন।
তিনি আরও বলেন, "তবে এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা, এতো তাড়াহুড়া করে হয় না। আমাদের আগে বুঝতে হবে দাওয়াতটি কি কারো ব্যক্তিগত উদ্যোগে, নাকি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে। আমরা বসবো তারপর সিদ্ধান্ত নেব।"