বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে ফেরত আনা নিয়ে আলোচনার পথ সুগম হল: আইনমন্ত্রী
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফেডারেল কোর্টের রায়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে কানাডার সঙ্গে আলোচনার পথ সুগম হয়েছে।
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী বলেন, “এই রায়ের ফলে একটা লাভ হয়েছে যে, কানাডিয়ান সরকার বলেছিল এটা সাট কেইস, এটা নিয়ে আর আলাপ-আলোচনা হতে পারে না। সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যাবে।”
নূর চৌধুরী কোনো ভুল তথ্য কানাডিয়ান সরকারকে দিয়েছেন কিনা, সেটা দেখা যাবে এবং সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার তাদের সঠিক তথ্য দিতে পারবে বলেও জানান মন্ত্রী।
“এছাড়া নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কী আছে তা দিতে পারব। এটা নিশ্চয়ই একটা ইতিবাচক দিক। আর সেই সম্ভাবনা আমরা পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করব,” যোগ করলেন তিনি।
নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কানাডিয়ান সরকারকে চিঠি দেবার চিন্তাভাবনা চলছে। সে চিঠিতে সঠিক তথ্য দিয়ে নূর চৌধুরীর বিষয়ে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, “তাকে ফেরত আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে এটা অত্যন্ত ছোট একটি পদক্ষেপ। আজকেই আমরা এতটা আশাবাদী হতে চাই না যে, তাকে আনতেই পারব বা অনেকদূর এগিয়ে গেছি। তবে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে।”
জাতির পিতার পলাতক খুনীদের দেশে ফেরত আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী।নূর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সরকার চালিয়ে যাব। বাকি চার জনের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য না থাকলেও তাদের অবস্থান জেনে ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
কানাডার ফেডারেল কোর্টে মামলার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে আনিসুল হক বলেন, “কানাডিয়ান সরকারের কাছে বাংলাদেশ নূর চৌধুরীকে ফেরত চাইলে, কানাডিয়ান সরকার বলে যে, তোমাদের দেশে মৃত্যুদণ্ড আছে এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে তাকে ফেরত দেব না। আমরা যখন দেখলাম, তাকে সেখানে অ্যাসাইলাম দেওয়া হয়নি এবং তার ডেপুটেশন (আশ্রয়ের আবেদন) স্থগিত করে দেওয়া হয়। ডেপুটেশন স্থগিত করে দিলে যেই দেশের নাগরিক তাকে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠাতে হয়।”
নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তিনি কী ধরনের বিপদের সম্মুখীন হবেন তা যাচাই করতে তিনি ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট’-এর আবেদন করেন কানাডিয়ান সরকারের কাছে। এই আবেদনের পর ডেপুটেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
আইনমন্ত্রী বলেন, “‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট’ কীসের ভিত্তিতে করা হয়েছে, কী তথ্য দিয়েছেন তিনি, এসব জানতে চাইলে কানাডিয়ান ‘মিনিস্ট্রি অব ইমিগ্রেশন রিফিউজিস এন্ড সিটিজেনশিপ’ তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।”
তিনি বলেন, “এটা আমাদেরকে তাদের বলার কথা, কিন্তু তারা জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার কথা বলে এটা বলেনি এবং আমাদের কী জনস্বার্থ এটাও দেখাতে বলে। আমরা বললাম, এটা ঠিক না, তার স্ট্যাটাস সম্পর্কে এবং কী কারণে দেরি করছেন তা জানাতে পারেন। তারা যখন আমাদের আবেদন নাকচ করে দেয়, তখন সেখানে একজন আইনজীবী নিয়োগ করে কানাডিয়ান ফেডারেল কোর্টে আবেদন করি। আদালত বলেছে, যে তথ্যগুলো দেওয়া হচ্ছে না, সেগুলো তাদের দেওয়া উচিত। কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।”
কানাডার ফেডারেল কোর্ট ১৭ সেপ্টেম্বর এক রায়ে ওই দেশে নূর চৌধুরীর অবস্থান-সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের ওপর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আদেশ দেয়। ফেডারেল কোর্টের বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি এই আদেশ দেন।
রায়ে আদালতের বিচারক বলেছেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসন-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর প্রায় ৩৫ বছর পর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান বিদেশে পলাতক রয়ে যান।
এর মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে এখনও বাকিদের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।