আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে ক্যাসিনো: মির্জা ফখরুল
জুয়া-ক্যাসিনো বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে যুবলীগের কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপটে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে ‘ক্যাসিনোর জোয়ার বইছে’।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা বিএনপি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “এরা (আওয়ামী লীগ) জনগণের সরকার নয়, এরা গণবিরোধী সরকার। তারাই বড়াই করে বলে বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নের রোল মডেল। এমন উন্নয়নের রোল মডেল যে, এখন আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে ক্যাসিনোর জোয়ার বইছে।”
তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে।
“বিদেশি কেউ বিনিয়োগ করছে না। কারণ এটা একটা লুটেরা দেশ হয়ে গেছে। তারা মেগা-প্রজেক্টের নামে মেগা-লুট করছে।”
দেশে বিচার ব্যবস্থায় ‘ভয়াবহ নৈরাজ্য’ চলছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে দলীয় লোক ছাড়াই বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে ভোট কারচুপির মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এজন্য বর্তমান সংসদ কোনো কাজ করছে না। প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে হবে এটাই সরকারের মূল চাওয়া। তাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে জনগণ।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গারা ২ বছরের বেশি সময় ধরে এদেশে আছে। একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি সরকার।
নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর কথা উল্লেখ করে সমাবেশে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ৬ বছর ধরে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম শতশত পরিবার তাদের স্বজনকে হারানোর জন্য ব্যথিত। তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা হলে সান্তনা দেওয়ার ভাষা থাকে না। বিএনপির হাজারও নেতাকর্মী এখন পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছে। ২৬ লক্ষ নেতাকর্মীর উপর মামলা দেওয়া হয়েছে।”
এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে নেতা কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, “এখন বিচারালয় সরকারের নির্দেশে চলে। যে মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে তাতে তার সম্পৃক্ততা নেই। শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ভয় পান বলেই তাঁকে আটক করে রেখেছেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “আদালতের উপর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করতে হবে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন না। তাই আগে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি আর দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।”
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাহের চৌধুরী শামীমের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যনি, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন প্রমুখ।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় সমাবেশটি শুরু হয়। সেখানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ‘অনুমতি না থাকার’ কারণ দেখিয়ে সমাবেশস্থলের মঞ্চ খুলে নেয় পুলিশ। পরে রাতভর নানা নাটকীয়তার পর সমাবেশের অনুমতি দেয় সিলেট মহানগর পুলিশ।