পেঁয়াজ চাষীদের ৪ বছর বিনামূল্যে বীজ, সার দেবে সরকার
আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে পেঁয়াজে স্বাবলম্বী হতে আগামী মওসুম থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেবে সরকার।
ফরিদপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়াসহ যেসব জেলায় পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়, সেসব জেলার ৫০ হাজার কৃষক আগামী রবি মওসুম (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) থেকেই এ সহায়তা পাবেন।
প্রত্যেক কৃষক এক বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য সরকার থেকে বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ, এমওপি ও ডিএপি সার পাবেন। এভাবে আগামী চার বছর পেঁয়াজ চাষীদের এ সহায়তা দেয়া হবে। সরকার এসময়ে মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়।
আগামী মওসুমের জন্য পেঁয়াজ চাষীদের সহায়তা দিতে ভর্তুকি বাবদ ২৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব সোমবার অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এই অর্থ দিয়ে বীজ ও সার কিনে কৃষকদের মাঝে তা সরবরাহ করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষকপ্রতি এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য ৭৫০ গ্রাম বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সরকার ও ১০ কেজি করে এমওপি সার পাবেন।
পেঁয়াজের পাশাপাশি আসন্ন বোরো মওসুমের জন্য ধানচাষীদেরও ৭৬ কোটি টাকা সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশজুড়ে কয়েক দফা বন্যায় আমন মওসুমে ধানের উৎপাদন আড়াই লাখ টন কম হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই ক্ষতি পোষাতে বোরো মওসুমে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৫ লাখ কৃষককে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ ও চারা সরবরাহ করবে সরকার।
কৃষিতে শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের পাইলটিং হিসেবে দেশের ৬৪ জেলার একটি করে ইউনিয়নকে সমতলিক ধান চাষের আওতায় আনা হচ্ছে।
পেঁয়াজ ও ধান চাষে সরকার এর আগে কখনো এভাবে ভর্তুকি দেয়নি জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারতের আকস্মিক রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে এবছর পেঁয়াজ নিয়ে সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। এরকম অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে এড়াতে ও কোভিড পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারত দু'দফায় হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশকে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দেশের বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৭০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের রপ্তানি এভাবে বন্ধ করার আগে বাংলাদেশকে জানাতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা সত্বেও দ্বিতীয় দফায়ও বাংলাদেশকে না জানিয়েই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত।
এ অবস্থায় মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন, মিশরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। তখন থেকেই পেঁয়াজ চাষ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে গত মাসে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ও বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি সভা করেন। পেঁয়াজ চাষীদের সহায়তা দিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ৩৩ লাখ টন। গতবছর দেশে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল। সরকারের দেয়া ভর্তুকির কারণে এবার উৎপাদন বেড়ে ২৮ লাখ টনে উন্নীত হবে হবে আশা করা হচ্ছে। এভাবে আগামী চার বছরে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। আগামী বছর আরো ১২ হাজার হেক্টর পেঁয়াজ চাষে যুক্ত হবে। আগামী চার বছর ধরে পেঁয়াজ চাষের জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে।
১৫ লাখ কৃষক বোরো বীজ পাবেন বিনামূল্যে
কয়েক দফা বন্যায় এবার লক্ষমাত্রার তুলনায় আমন উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা থেকে বোরোর উৎপাদন বাড়াতে চাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এজন্য বোরো মওসুমে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের চাষ বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে ধান বীজ ও চারা সরবরাহ করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এজন্য ১৪ লাখ ৯৬ হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা জমির জন্য ৫০০ টাকা মূল্যের ২ কেজি বীজ দেয়া হবে। এতে সরকারের ব্যয় হবে ৭৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, 'এ বছর ২.৩ কোটি টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তিন-চারদফা বন্যায় আমন মওসুমে ধানের উৎপাদন লক্ষমাত্রার তুলনায় আড়াই লাখ টন কম হবে বলে আমরা মনে করছি। বোরো মওসুমে উৎপাদন বাড়িয়ে এই ঘাটতি দূর করার পরিকল্পনা থেকেই এবছর প্রথমবারের মতো হাইব্রিড ধান বীজে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।'
তিনি বলেন, এবছর মোট ৪৮.৪ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড চাষ হবে ১১ লাখ হেক্টর জমিতে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে নতুন করে হাইব্রিড চাষ করবেন এমন কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ সুবিধা দেয়া হবে।
দেশের প্রতিটি জেলার একটি করে ইউনিয়নে সমতলিক ধানচাষ ব্যবস্থার আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, এসব ইউনিয়নের চাষীরা ধানের চারা রোপন থেকে শুরু করে হার্ভেস্টিং পর্যন্ত সবকিছু যান্ত্রিকভাবে করবেন। একই সময়ে একই জাতের ধানের চারা রোপন করবেন, ফলে এসব ধান একই সময়ে পাকবে এবং হার্ভেস্টিং হবে। এতে ধানের উৎপাদন বাড়বে।