ভারতের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী
ভারত ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের নিজ নিজ জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে এই অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরকে আকর্ষণের যোগ্যতা রাখে জানিয়ে তিনি বলেন, “দু’দেশের উন্নত যোগাযোগের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারতের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে পারেন। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এশিয়ার দেশগুলোতেও তারা উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিও করতে পারেন।”
শুক্রবার ভারতের রাজধানীর হোটেল আইটিসি মৌরিয়ায় আয়োজিত ভারত-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। খবর বাসস ও ইউএনবির।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই উপ-অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অপার বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে দেশটি প্রায় ৪ বিলিয়ন মানুষের সমন্বিত বাজারের সংযোগকারী ভূখণ্ড হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্বের অধিকাংশ বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশ তাদের প্রতিবেশি দেশের কাছ থেকে প্রাথমিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের প্রকল্প গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মনে করেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আরও এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
“আমরা সারাদেশে একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি, যার প্রায় ১২টি তৈরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৪টি অঞ্চল ৩টি দেশের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মংলা, ভেড়ামারা ও মিরসরাইয়ে তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এসব অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগ আমাদের রপ্তানি-ভিত্তি আরও প্রশস্ত করবে।”
আইবিবিএফের প্লাটফর্মের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক উপভোগ করছে। মোদিজি নিজে যাকে ‘সোনালী অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন।”
প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্স-এর পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৯তম বৃহত্তম অর্থনীতি। বিশ্ব ব্যাংকে সাম্প্রতিক প্রকাশনায় বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির ৫টি দেশের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের আউটলুক ২০১৯ রিপোর্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীর অঞ্চলের দ্রুতবিকাশমান অর্থনীতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে তবে আশা করি, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পরিণত করা সম্ভব।
সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ১৬২ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।”
দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে ভারত। বাংলাদেশ এই দেশের অষ্টম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ভারতে আমাদের রপ্তানিও গত বছর প্রথমবারের মতো ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দু’দেশের সম্পর্ক গভীরতর হবার সুযোগ রয়েছে বলেও আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পেঁয়াজসহ যে কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে আগেভাগেই জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। তিনি হিন্দিতে বলেন, “হঠাৎ করে আপনারা বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে নোটিশ দিলে আমরা অন্য দেশ থেকে ব্যবস্থা করতে পারতাম। ভবিষ্যতে এমন কিছু করলে আগে জানালে ভালো হয়।”
এ সময় তিনি তাঁর বাসায় রাঁধুনিকে রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন বলেও রসিকতা করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভারতের শিল্প ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ভারতের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) সভাপতি বিক্রম শ্রীকান্ত কিরলসকার, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি সন্দ্বীপ সোমনি এবং অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি অব ইন্ডিয়ার (এএসএসওসিএইচএএম) সভাপতি বালকৃষ্ণ গোয়েঙ্কা।
অনুষ্ঠানে ভারতের শিল্প ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও তাঁর বক্তব্যে এখন দু’দেশের মধ্যেকার সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্ক থাকার কথা বলেন। সুসম্পর্কের এই সুবিধা গ্রহণ করে দু’দেশের উন্নতির জন্য অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনিও আহ্বান জানান।
সে সঙ্গে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ‘প্রতিশ্রুতিশীল বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ভিডিও উপস্থাপিত হয়।