দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ ও সৌহার্দ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৪ দফা প্রস্তাব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ৪ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন।
শুক্রবার (স্থানীয় সময়) হোটেল তাজ প্যালেসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনোমিক সামিটের সমাপনী অধিবেশনে তিনি বলেন, “গত দশকগুলোতে আমরা অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী চিন্তা-ভাবনা ও উদ্যোগ দেখেছি। এর কিছু সফল হয়েছে, অন্যগুলো বাস্তবতায় আসেনি।”
পরবর্তী দশকে মৈত্রী ও সহযোগিতার মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা পরিচালনায় চারটি নীতি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন তিনি। খবর বাসস ও্ ইউএনবির।
তাঁর মতে, প্রথমত, আমাদের সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যুগ যুগ ধরে বহুত্ববাদ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি। এর মাধ্যমে আমরা ধর্ম, জাতি ও ভাষাগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যের উদযাপন করতে পারে। এটি হচ্ছে মৌলিক বিষয়।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দ্রুত প্রবৃদ্ধির সময়ে সমাজে যেন বৈষম্য আরও বেড়ে না যায় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদ হতে হবে অন্তর্ভুক্তমূলক এবং তা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।স্বল্পোন্নত সম্প্রদায় বা দেশ পিছনে পড়ে থাকবে না। তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।”
দক্ষিণ এশিয়ায় জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে একে অন্যের অন্যদের হাত ধরতে হবে উল্লেখে করে তিনি তাঁর তৃতীয় প্রস্তাবে মত দেন যে, সম্প্রদায় ও দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা হচ্ছে চাবিকাঠি। ভ্রান্ত ধারণার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে তাই সবাইকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুসৃত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিটি বাংলাদেশ এখনও অনুসরণ করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর এবং ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।তাছাড়া বাংলাদেশ এখন ভারতের সঙ্গে আন্তঃনদী নাব্যতা উন্নয়নে কাজ করছে। ভারত থেকে ইন্টার গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। এ বিষয়গুলোও জানান প্রধানমন্ত্রী।অন্যদিকে আমাদের বেসরকারি খাত স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
এ অঞ্চলের রাজনীতি,অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এ ধরনের সহযোগিতাপূর্ণ সংস্কৃতি প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা পরিচালনার উপর গুরুত্ব দেন।স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার কথা ভুলে না যাবার উল্লেখ করে তিনি আহ্বান জানান, “আসুন জনগণের ভালোর জন্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রসার ঘটিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখি।”
তিনি বলেন, “আমার বাবা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন, তাদেরকে ভালবাসতেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, দেশের উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি কোলকাতায় ঘোষণা দেন এভাবে, প্রতিবেশি দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং আমাদের জনগণের স্বার্থে গঠনমূলক নীতিমালা প্রণয়নে আমরা সহযোগিতা করব।”
বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ বিমসটেক, সার্ক, বিবিআইএন ও বিসিআইএমের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
ডব্লিউইএফ সভাপতি বোর্জে ব্রেন্ডের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট ছিলেন, সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ি কিট, সেকুইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেন্দ্র সিং, অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজের নির্বাহী সহ-সভাপতি শোবানা কারমিনেনি ও বুকিং ডট কম-এর চেয়ারপারসন জিলিয়ান টানস।
সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সংযোগ প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সংযোগগুলোর আবার চালুর উদ্যোগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সবসময় এ নিয়ে চিন্তা করি। আমরা এ অঞ্চল এবং এর বাইরের অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ে প্রতিষ্ঠাতেও ভূমিকা রাখছে।