পোষা কুকুরের মৃত্যুতে ব্রিটেনের রানির শোকপালন
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবিত শেষ দুইটি পালিত কুকুরের একটির মৃত্যুতে শোক বিরাজ করছে ব্রিটেনের রাজপ্রাসাদে। গত ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে রানির বিশ্বস্ত সঙ্গী ভালকান নামের কুকুরটি কয়েক সপ্তাহ আগে উইন্ডসরে মারা যায়।
ভালকান ছিল ডরগি জাতের মিশ্র কুকুর। রানির জীবিত শেষ কুকুরটির নাম ক্যান্ডি, ক্যান্ডিও ডরগি প্রজাতির কুকুর। পোষা কুকুরের মৃত্যুর শোকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপ এবারের বড়দিন একাই পালন করবেন।
এর আগে ২০১৮ সালে ক্যন্সারে আক্রান্ত হয়ে তার আরেকটি পোষা কুকুর উইলো মারা যায়। উইলো ছিল করগি প্রজাতির কুকুর। উইলোর মৃত্যুর পর রানি আর কোনো করগি প্রজাতির কুকুর পোষেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবসময়ই করগি প্রজাতির কোনো কুকুর তার সঙ্গী হিসেবে পাশে ছিল। এ প্রজাতির কুকুরের প্রতি তার বিশেষ ভালোবাসা ছিল।
১৯৪৪ সালে এলিজাবেথ তার ১৮ তম জন্মদিনে সুসান নামের করগি জাতের একটি কুকুর উপহার পান। উইলো ছিল সুসানের-ই বংশধর। রানির করগি জাতের একটি কুকুর ও প্রিন্সেস মারগারেটের ডাচশান্ড জাতের কুকুর পিপকিনের প্রজননেই জন্ম রানির শেষ দুইটি কুকুর ভালকান ও ক্যান্ডির। ২০১৬ সালে রানির ৯০ তম জন্মদিনে ভ্যানিটি ফেয়ারের প্রচ্ছদে দেখা যায় উইলো, ভালকান ও ক্যান্ডিকে।
লকডাউনের সময় বাকিংহামের রাজপ্রাসাদ থেকে আইসোলেশনের জন্য উইন্ডসরের প্রাসাদে যাওয়ার সময় রানির কোলে বসা ছবিও দেখা যায়। রানি নিজেই তার পোষা কুকুরদের দেখভাল করেন। বাকিংহাম ও উইন্ডসরের প্রাসাদে রানির ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টেই বাস ছিল কুকুরগুলোর, এমনকি সানদ্রিংহাম ও স্কটটল্যান্ডে যাওয়ার সময়ও ব্যক্তিগত জেটে কুকুরদের সাথে নিয়েই যান তিনি। তিনি নিজেই খাবার তৈরি করে তার পোষা কুকুরদের খাওয়ান। এখনো তিনি কুকুরদের হাঁটতে নিয়ে যেতে পছন্দ করেন।
প্রচলিত আছে রানি টায়ারা ও হেডস্কার্ফ পরলেই তার কুকুরগুলো বুঝে যায় কোথাও যাওয়ার সময় হয়েছে। ডিউক অব ইয়র্ক একবার বলেছিলেন, তার মায়ের কুকুরদের প্রতি ভালোবাসাই এতো বয়সেও তাকে সুস্থ সামর্থ্যবান থাকতে সাহায্য করেছে।
২০১৫ সাল থেকে নিজের পোষা কুকুরদের প্রজনন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার মৃত্যুর সময় নিজের আদরের কুকুরদের রেখে না যাওয়ার জন্যই মূলত এ সিদ্ধান্ত। পোষা প্রাণীর মৃত্যু যেমন মালিকের জন্য কষ্টদায়ক, মালিকের মৃত্যুতেও একইভাবে কষ্ট পায় প্রাণীরা। এ ভয় থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেট মিডলটনের পোষা কুকুর লুপোর মৃত্যু সংবাদের কয়দিন পরই আসে ভালকানের মৃত্যু সংবাদ। ২০১১ সালে উইলিয়াম ও কেটের বিয়ের সময় লুপোকে উপহার পান তারা।
এমনকি তাদের ছেলে প্রিন্স জর্জের নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা ছিল লুপোর। তারা কয়েকটি কাগজে কয়েকটি নাম লিখে মেঝেতে ছড়িয়ে দেন। লুপো যে কাগজের পাশে গিয়ে থামে সে নাম অনুযায়ীই প্রিন্স জর্জের নামকরণ হয়।
এ সপ্তাহের শুরুতেই রানি ও প্রিন্স ফিলিপ জানিয়ে দিয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের সাথেও দেখা হবেনা এবারের বড়দিনে। এবারের বড়দিন একাই কাটাতে চান তারা। সাধারণ সময়ে নরফকের সানদ্রিংহামে পরিবারের সদস্যদের সাথে উৎসব উদযাপন করেন তারা। ১৯৪৯ সাল থেকে এটিই প্রথম বছর যেবার তারা চার সন্তানের কারো উপস্থিতি ছাড়াই বড়দিন কাটাবেন। উইন্ডসরে এ মূহূর্তে কোভিড-১৯ এর কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন চলছে। এরফলে সর্বোচ্চ ৬ জন একসাথে বাহিরে সময় কাটাতে পারবেন।
বড়দিন উপলক্ষ্যে এবার রানি গীর্জায়ও যাবেন না, প্রাসাদেই প্রার্থনার কাজ সারবেন। বাকিংহাম প্রাসাদের একজন মুখপাত্র জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রানি ও প্রিন্স ফিলিপ এবার উইন্ডসরে নির্জনেই বড়দিন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।