কাতারে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ
কাতার বনাম বাংলাদেশের ম্যাচ। কিন্তু ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই কাতারের প্রতিপক্ষ যেন পাল্টে গেল। ম্যাচের নাম হয়ে উঠলো কাতার বনাম আনিসুর রহমান জিকো। ১১ জন বনাম একজনের লড়াই। কাতারের মুহুর্মুহু আক্রমণ আর দলকে বাঁচাতে বাংলাদেশ গোলরক্ষক জিকোর প্রাণান্ত চেষ্টা। কিন্তু তার একার চেষ্টা রুখতে পারেনি স্বাগতিকদের। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের ফিরতি লেগে কাতারের বিপক্ষে বিধ্বস্তই হতে হলো জামাল ভূঁইয়াদের।
২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের 'ই' গ্রুপের প্রিলিমিনারি রাউন্ডের দ্বিতীয় ধাপের ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হেরে গেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার দোহার আবদুল্লাহ আল খলিফা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে সামান্যতম লড়াইও করতে পারেনি বাংলাদেশ। আগের লেগে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে হারা বাংলাদেশ এবার অসহায়ের মতো শুধু গোলই হজম করে গেছে।
র্যাঙ্কিংয়ে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিস্তর তফাৎ। ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজকরা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৫৯ নম্বরে। বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং ১৮৪। ১২৫ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ কতোটা লড়াই করতে পারবে, সেটা অনেকটাই অনুমেয় ছিল। ম্যাচে হয়েছেও তাই। ম্যাচের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত বল দখলের লড়াইয়ে কাতার ঢের এগিয়ে ছিল। বাংলাদেশকে কেবল আক্রমণ ফেরাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।
একটা সময়ে অবশ্য কাতারের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়তো বাংলাদেশ। ১৪ বছর আগে ফিরলেই মিলবে প্রমাণ। ২০০৬ সালে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে কাতারের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাতারের ফুটবল যতোটা এগিয়েছে, বাংলাদেশ পারেনি সেই রেসে পা মেলাতে। তাই কাতারের বিপক্ষে শুধু হেরেই এসেছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের পরের চার ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে ৪-০, ৪-১, ৩-০ ও ২-০ গোলে হারে বাংলাদেশ।
তালিকায় আরও একটি বড় হার যুক্ত হলো। শুক্রবারের ম্যাচটি মাঠে গড়াতেই বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কাতার। অবিরত আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে দিশেহারা করে তোলে স্বাগতিকরা। যা চলে শেষ পর্যন্ত। পুরো ম্যাচে কাতারের গোলপোস্টে মাত্র একটি শট নিয়েছে বাংলাদেশ। বিপরীতে স্বাগতিকরা নিয়েছে ৩২টি শট। ম্যাচে ৭৬ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখেছে কাতার।
তৃতীয় মিনিটে আক্রমণ সাজায় কাতার। কিন্তু আব্দেল করিমের জোরালো শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। পরের মিনিটে আকরাম হাসান আফিফের ক্রস থেকে আহমেদ আলাদিনের হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। টানা আক্রমণ করতে থাকে কাতার। নবম মিনিটেই মেলে সাফল্যের দেখা। আব্দেল আজিজের শট বাংলাদেশের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে জালে জড়ায়।
১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে কাতারের গোলক্ষুধা যেন আরও বেড়ে যায়। বল নিয়ে সোজা বাংলাদেশের ডি-বক্সে হানা দিচ্ছিল স্বাগতিকরা। খেলার জন্য বাংলাদেশের ডি-বক্সকেই যেন বেছে নিয়েছিল কাতার। ৩৩তম মিনিটে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় তারা। ডি-বক্সের দাগের ওপর থেকে অসাধারণ এক শটে গোল করেন আকরাম আফিফ। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে কাতার।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই চিত্র। একের পর এক আক্রমণ করে যেতে থাকে কাতার। বল তাদের পায়েই থেকেছে সব সময়। ৬৩তম মিনিটে আল মোয়েজ আলীর অসাধারণ শট ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্লাভসবন্দী করেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক জিকো। পরের মিনিটে আরও একটি আক্রমণ থেকে দলকে বাঁচান জিকো।
৭০তম মিনিটে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। বিপলু আহমেদ ডি-বক্সের মধ্যে মোয়েদ হাসানকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় কাতার। স্পট কিক থেকে গোল করেন আল মোয়েজ আলী। বলের লাইনেই ছিলেন জিকো, কিন্তু গতির কাছে হার মানেন তিনি। বল জড়িয়ে যায় জালে।
৭৮ মিনিটে কাতারের হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন আল মোয়েজ আলী। আর যোগ করা সময়ে ব্যবধান ৫-০ করেন জোড়া গোল করা আকরাম আফিফ। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ একটি মাত্র কর্নার পেয়েছে। যদিও সেখানে কোনো সম্ভাবনাই তৈরি হয়নি। একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা মাহবুবুর রহমান সুফিল সতীর্থদের কাছ থেকে বলের কোনো যোগানই পাননি। কাতারের রক্ষণভাগ অটুটই থেকে যায়। পুরো ম্যাচজুড়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে জিকোকে। তার কারণেই ব্যবধান ৫-০তে থেকেছে, না হলে ব্যবধান আরও বড় হতে পারতো।
৬ ম্যাচের ৫টিতে জেতা কাতার ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে। ১২ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে ওমান। আফগানিস্তান তিন ও ভারত চার নম্বরে আছে। ৫ ম্যাচের ৪টিতে হার ও একটি ম্যাচে ড্র করা বাংলাদেশ এক পয়েন্ট নিয়ে সবার শেষে অবস্থান করছে।