এভাবে চলতে থাকলে টিভি নাটকও সিনেমার মতো ধুঁকবে: চঞ্চল চৌধুরী
ওটিটি প্লাটফর্ম হৈচৈয়ে 'তকদীর' নামে নতুন একটি ওয়েব সিরিজ প্রচার শুরু হয় ১৮ ডিসেম্বর। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী।
'তকদীর'-এ অভিনয় থেকে শুরু করে এই সময়ের টেলিভিশন নাটকের নানা বিষয় নিয়ে কথা হলো এই অভিনেতার সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার
তকদীরে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
চঞ্চল চৌধুরী: এটা খুবই ভালো অভিজ্ঞতা। একটা সিনেমার করার জন্য যে আয়োজন থাকে, এই ওয়েব সিরিজটিতে সেরকম আয়োজন ছিল। প্রোডাকশন মিটিং থেকে শুরু করে, প্রি প্রোডাকশন, প্রোডাকশন এবং পোস্ট প্রোডাকশন সবই প্রফেশনালি করা হয়েছে। যেটা আমাদের দেশে সচরাচর করা হয় না। সবমিলিয়ে বলব একটা প্রফেশনাল কাজের সঙ্গে যুক্ত হলাম অনেক দিন পর।
আপনি ইদানিং ওটিটির দিকে বেশি ঝুঁকছেন?
চঞ্চল চৌধুরী: ওটিটি দিকে ঝুঁকছি, ব্যাপারটা তা নয়। আমি সবসময় ভালো কাজকে গুরুত্ব দিয়েছি। এখন টেলিভিশন মাধ্যমের অবস্থা খুবই খারাপ। বাজেট কমে গেছে। নন-প্রফেশনাল লোকজন দিয়ে ভরে গেছে। এখানে ঠিকমতো কাজ করার উপায় নেই। আমি চাইলে এখন মাসের ত্রিশ দিনই শুটিং করতে পারি। বান্ডিল বান্ডিল টাকা ঘরে আনতে পারি। কিন্তু আমি সেটার দিকে তাকাইনি। আমি সবসময় ভালো কাজের পেছনে ছুটেছি। এজন্য যদি আমাকে সারা মাস অপেক্ষা করতে হয়। সেটাও করেছি।
এ কারণেই গতানুগতিক কোনো চলচ্চিত্রে আপনাকে দেখা যায়নি?
চঞ্চল চৌধুরী: একদম তাই। ধরুন, মাসে আমার কাছে ১০০টা চিত্রনাট্য এলো। আমি তো সেখান থেকে চাইলে ৫০টা কাজ করতে পারি। কিন্তু আমি সেটাও করি না। আমি চলচ্চিত্রের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করি। তারপর একটা ভালো কাজ করি। আমি মনে করি, কোয়ালিটি কাজ করলে সেটা অবশ্যই সবাই পছন্দ করবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হব। আমার ক্যারিয়ারের যতগুলো ছবি, সবগুলোর দিকে তাকালে এটা বোঝা যাবে।
আপনি যেসব ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করছেন, সেগুলো বেশিরভাগ ইন্ডিয়ান প্লাটফর্ম।
চঞ্চল চৌধুরী: আসলে কোথায় কাজ করছি, সেটা মুখ্য নয়। কেমন কাজ করছি, সেটা জরুরি। ওটিটি দেশ ম্যাটার করে না। মানুষ দেখতে পেল কি না, সেটা ম্যাটার করে। আর এমন না যে, ওই কাজ শুধু ইন্ডিয়ার দর্শক দেখতে পাবেন। এটা পুরো পৃথিবীর মানুষ যে কোনো জায়গা বসে দেখতে পাবেন। বাংলাদেশ থেকেও খুব সহজে সাবস্ক্রাইব করা যায়। এটাও তো ভাবতে হবে। আমি একটা ভালো কাজ করলাম, সেটা যদি নাই দেখতে পেল, তাহলে কাজ করে লাভ কী?
সমস্যা হলো, মানুষ এখন শুধু ফ্রি দেখতে চায়। কোনো কনটেন্ট এলেই সেটা ইউটিউবে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে বা ডাউনলোডের আশায় থাকে। মনে রাখতে হবে, ফ্রি কোনোকিছু ভালো না। এটা নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ- যেটাই হোক। আমাদের সবার আগে বুঝতে হবে, একটা কনটেন্ট এমনি এমনি তৈরি হয়নি। এর পেছনে অসংখ্য মানুষের পরিশ্রম ও অর্থ আছে। সেটা কি আমাদের ফ্রি দেখা উচিত? আমাদের দর্শকদেরও একটু দায়িত্বশীল হতে হবে। ফ্রি দেখার আশা ছেড়ে দিতে হবে।
অনেক দিন ধরে অভিনয় করছেন। দেশের টিভি নাটকের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কেমন বলে মনে করেন?
চঞ্চল চৌধুরী: এখন টেলিভিশন নাটকের যে অবস্থা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এটা আমাদের দেশের সিনেমার মতো অবস্থার মতো হয়ে যাবে। দেশের সিনেমা যেমন ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে, সেভাবে হয়তো টিভি নাটক থাকবে। মোট কথা, টেলিভিশন মালিকদের বাজেট বাড়িয়ে ভালো কনটেন্টের দিকে জোর দিতে হবে। তাদের ওটিটি প্লাটফর্মের সঙ্গে যুদ্ধটা করতে হবে। ভালো কাজ হলে মানুষের কাছে মাধ্যম বা টাকা কোনো ব্যাপার না। সেটা দেখবেই বলে আমি মনে করি।
কিন্তু আপনি তো চলচ্চিত্রেরও মানুষ। সিনেমা ধ্বংস হলে সে দায় কি আপনার ওপর আসে না?
চঞ্চল চৌধুরী: এ দায় একা আমার না। হয়তো দায় আছে, কিন্তু দায় এড়িয়ে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার মানুষ নেই। আমাদের সবকিছু ঠিক করার জন্য দায়িত্বশীল মানুষ দরকার। পেশাদার মানুষ দরকার। না হলে যেভাবে চলছে একদিন এটার অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না।
শেষ প্রশ্ন, করোনাকালে আপনি ঘরবন্দি ছিলেন। এখনো কাজ কম করছেন? সময় কাটে কী করে?
চঞ্চল চৌধুরী: নিজে অনেক কিছু করার সুযোগ পেয়েছি। প্রচুর সিনেমা দেখেছি। নিজেকে সময় দিয়েছি। প্রচুর ভেবেছি। আর আমার বাচ্চার সঙ্গে সময় কেটেছে। এখনো কাজ কম করছি। চেষ্টা করছি প্রফেশনাল মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে।