নুসরাত হত্যায় ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড
ফেনীর নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ জনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেনী জজকোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি হলেন— সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
এ বছরের ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাদ্রাসার সে সময়কার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার যৌনহয়রানির প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসা-অধ্যক্ষের নির্দেশে কয়েকজন নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চার দিন ভুগে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত।
সারাদেশে এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে ঝড় ওঠে। নুসরাত হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করতে থাকেন সবাই। নুসরাতের পরিবার ২৭ মে মামলা দায়ের করে।
২৯ মে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) মামলার তদন্ত শুরু করে। তাদের দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে প্রধান অভিযুক্ত সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করা হয়।
৩০ মে সিনিয়র বিচারিক হাকিম জাকির হোসেন মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন।
এই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, মাদ্রাসা-অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, নূরউদ্দিন, ইমরান হোসেন মামুন, হাফেজ আবদুল কাদের, ইফতেখার উদ্দিন রানা, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ওরফে মকসুদ, কামরুন্নাহার মনি, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাভেদ, উম্মে সুলতানা পপি, মহিউদ্দিন শাকিল, মোহাম্মদ শামিম, আবদুর রহিম শরীফ এবং আবসার উদ্দিন।
অভিযুক্তদের বারো জন অপরাধ স্বীকার করেছেন।
১০ জুন ফেনীর আদালতে এলে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ২০ জুন মাদ্রাসা-অধ্যক্ষসহ ১৬ জনকে আদালতে অভিযুক্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনালে ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে ১৬ জন মিলে নুসরাতের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। তিন দিন ধরে পরিকল্পনা করেছে তারা।
জেলে বসেই মূল হোতা মাদ্রাসা- অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নির্দেশনা দেন। স্থানীয় দুজন আওয়ামী লীগ নেতা ও কয়েকজন মাদ্রাসাছাত্রসহ সিরাজ-উদ-দৌলার অনুসারীরা ৬ এপ্রিল নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এর আগে, ২৭ মার্চ নুসরাত মাদ্রাসা-অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌনহয়রানির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেটি প্রত্যাহার করতে আপত্তি জানানোয় সিরাজ-উদ-দৌলা তাকে পুড়িযে মারার সিদ্ধান্ত নেন।