রোহিঙ্গা সঙ্কট একপাশে রেখে মিয়ানমার থেকে চাল কিনছে বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে চলমান মতপার্থক্য এড়িয়ে মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল কিনছে বাংলাদেশ। দেশে ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার প্রধান খাদ্য উৎসটির ঘাটতি পূরণেই দ্রুত এ পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
চালের উচ্চমূল্য সরকারের জন্য সবসময়েই ছিল সংবেদনশীল। গতবছর দেশে ব্যাপক বন্যায় বিপুল পরিমাণ জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় চালের মজুদ হ্রাস পায়। ফলে বাজারদরও চড়তে থাকে। দেশে মজুদের এ ঘাটতি পূরণেই তৎপর হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থীর প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের অনীহায় ঢাকা সন্তুষ্ট নয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর চরম নিপীড়নমূলক অভিযানের মুখে এদের সিংহভাগ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এনিয়ে দুই দেশের চরম মতপার্থক্য থাকা সত্বেও আপাতত সেটা পাশ কাটিয়ে চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ তদন্তকারীরা রোহিঙ্গা বিতারণকে গণহত্যার অভিপ্রায়ে নেওয়া পদক্ষেপ বললেও, মিয়ানমার বরাবর সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুসারে; চালের মূল্য, বীমা, ফ্রেইট লাইনার খরচ সবমিলিয়ে টনপ্রতি ৪৮৫ মার্কিন ডলারে মিয়ানমার থেকে সাদা (অসিদ্ধ) চাল আমদানি করবে বাংলাদেশ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম রয়টার্সকে জানান।
তিনি বলেন, "আমাদের প্রধান লক্ষ্য বাজারে চালের দাম কমানো। সরকারিভাবে এজন্য এক কোটি টন চাল কেনা হবে। পাশাপাশি, আগামী জুন নাগাদ বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের আরও এক কোটি টন কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।"
মিয়ানমারের সঙ্গে নির্ধারিত পরিমাণ চাল ক্রয়ের চুক্তি শিগগির স্বাক্ষরিত হবে এবং এপ্রিল নাগাদ কয়েক ধাপে সম্পূর্ণ চালান পৌঁছাবে বলেও উল্লেখ করেন সচিব।
দ্বিপাক্ষিক সরকারি চুক্তিতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নাফেদ এর কাছ থেকেও দেড় লাখ টন চাল কিনছে বাংলাদেশ। দানাদার শস্যটি ক্রয়ে সম্প্রতি বেশকিছু বড় অংকের দরপত্রও আহবান করা হয়।
নাজমানারা খানুম বলেন, 'রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় আমরা ভারত থেকে আরও চাল কিনতে পারি।' এব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয় ভারতের একাধিক রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি যোগ করেন।
বাংলাদেশ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ চাল উৎপাদক। বার্ষিক উৎপাদন হয় সাড়ে ৩ কোটি টন। তবে স্থানীয় উৎপাদনের সিংহভাগ জনসংখ্যার চাহিদা পূরণেই লাগে। তাই বন্যা বা ক্ষরার মতো দুর্যোগে শস্যের ক্ষতি হলে; প্রায়শই বড় আকারে আমদানির প্রয়োজন দেখা দেয়।
সূত্র: রয়টার্স