দণ্ডপ্রাপ্তদের হুমকিতে আতঙ্কিত নুসরাতের পরিবার
আদালতের এজলাসে আসামিরা নুসরাত জাহান রাফির পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা এ কে এম মুসা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রায় ঘোষণার পর ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় নিজ বাড়িতে তিনি এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, "আসামিরা রায় শোনার পর আদালতের এজলাস থেকে যেভাবে আমাদের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিয়েছে এতে আমাদের নিরাপত্তার হুমকি আগের থেকে আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।"
"আমার বৃদ্ধ বাবা, নুসরাতের দুই ভাই ও মায়ের নিরাপত্তা নিয়ে এখন আমি চিন্তিত", যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, "আসামিরা খুবই আপত্তিকর ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। তাদের কথাবার্তা শুনে আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ঘটনার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তা পেয়েছি। এখনও আমরা চাচ্ছি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হোক। কারণ তারা যেভাবে হুমকি দিয়েছে, তাতে আমরা ভয়ে আছি।"
এ ব্যাপারে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমদ বলেন, "আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা প্রস্তুত আছি।"
উল্লেখ্য, নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদরাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদরাসার ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
চলতি বছর ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার কার্যালয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনায় তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ৬ এপ্রিল পরীক্ষার কক্ষ থেকে ডেকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে কেরোসিন ঢেলে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়।
গত ২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। মাত্র ৬২ কার্যদিবসে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আর মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পিবিআইয়ের ৩৩ কার্যদিবস লাগে।