করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধান: উহানে অবশেষে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে চীনে তদন্ত করতে যাওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন।
১৩ জন বিশেষজ্ঞের ওই দল ১৪ জানুয়ারি উহান শহরে পৌঁছায়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দু'সপ্তাহ তারা আইসোলেশনে কাটিয়েছেন। অবশ্য কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে তারা ভিডিওকলের মাধ্যমে তাদের কাজ চালিয়ে গেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের কিছু না জানিয়েই তারা হোটেল থেকে বের হয়ে যান।
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানেই ২০১৯ সালের অন্তিম লগ্নে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের আবির্ভাবের কথা প্রথম জানা যায়। ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল নিয়ে এতদিন ধরে চীন কোনো মাথা ঘামায়নি। কিন্তু হিমায়িত খাদ্য আমদানির মাধ্যমে ভাইরাসটি দেশে প্রবেশ করছে- এমন দাবি থাকায় কোভিড-১৯-এর উৎপত্তিস্থল উহানে তদন্ত চলছে।
তদন্তকারী দলের সদস্যদের প্রবেশাধিকার নিয়ে উৎকণ্ঠা এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কথার লড়াইয়ের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন এ দলের মিশন শুরু করতে এমনিতেই বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেছে।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব ও প্রতিক্রিয়া ইউনিটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডেল ফিশার জানান, এটা রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়। উহানের তদন্তকে সবাই বিশ্ব বৈজ্ঞানিক সফর হিসেবে বিবেচনা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ফিশার আরও জানান, বেশিরভাগ বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেছিলেন, ভাইরাসটি একটি 'প্রাকৃতিক ঘটনা'।
উহান শহরে প্রাদুর্ভাব শুরুর এক বছর পর থেকেই কোভিড -১৯-এর শিকার বেশ কয়েকটি পরিবার এখনো এটির উৎস খুঁজে বেড়াচ্ছে। অনেকে আবার প্রকাশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দলটির সঙ্গে দেখা করতে চাইছে।
তদন্তকারী এ দলের চীনের উহানে পৌঁছানোর কথা ছিল জানুয়ারির প্রথম দিকে। দলটির সদস্যদের চীনে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় প্রকাশ্যে বেইজিংয়ের সমালোচনা করেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মহামারির শুরুর দিকে বৈশ্বিক এ সংস্থাকে 'চীনঘেঁষা' বলে অভিহিত করেছিলেন।
উহানে আবির্ভূত হওয়ার আগে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস অন্য দেশ থেকে চীনে এসেছে, বেইজিং এমন ভাষ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
আমদানি করা হিমায়িত খাবারের প্যাকেটে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে দাবি করছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। তাদের বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রও বলছে, ভাইরাসটি ২০১৯ সালে ইউরোপজুড়ে ছড়িয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বিশেষজ্ঞ দল আরও অন্তত দুই সপ্তাহ চীনে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনই তদন্ত নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী না হওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে সংস্থাটি।
'জবাব মিলবেই- এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া খুবই কঠিন কাজ,' চলতি মাসের শুরুতে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইক রায়ান।
কোভিড-১৯-এর উৎস নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল রাজনীতি।
- সূত্র: বিবিসি