মোটরবাইক রেজিস্ট্রেশন ফি কমল ৫০ শতাংশ
মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি প্রায় অর্ধেক কমিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। ১০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি ৪২০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০০ টাকা এবং ১০০ সিসির অধিক মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ৫৬০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাব্বির আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ডিসেম্বরে রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে নির্ধারণ করতে অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
টিভিএস অটো বাংলাদেশের সিইও এবং বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেমব্লার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার রায় বলেন, 'এটি ভালো উদ্যোগ এবং এ উদ্যোগের জন্য সরকারের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।'
তবু কিস্তিতে রোড ট্যাক্স আদায় করছে বিআরটিএ। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি। আধুনিক নম্বর প্লেটগুলোতে খরচই বেশি হয়ে থাকে।
রায় বলেন, 'এখন ১০০ সিসির মোটরসাইকেল চালাতে হলে ১০ হাজারের অধিক টাকার প্রয়োজন হবে,যা আমাদের মতো দেশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। একটি মোটরসাইকেলের পেছনে সারাজীবনে যে খরচ, তার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোকে চারবার তুলনা করলেও এই খরচ বেশি হবে।'
'ব্যয় নিয়ে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাব, যা স্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদন ও মোটরসাইকেল খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী শিল্পের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,' যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি, রোডট্যাক্স, নম্বরপ্লেটসহ অন্যান্য খাতে ক্রেতাকে মোটরসাইকেলের দামের প্রায় ২২ শতাংশ খরচ করতে হয়। ভারতে এজন্য খরচ হয় ৫-৮ শতাংশ।
গত বছর আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত 'বাংলাদেশ-জাপান পাবলিক প্রাইভেট জয়েন্ট ইকোনমিক ডায়ালগ (পিপিইডি)' সভায় জাপানি বিনিয়োগকারীরা মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনসহ আনুষঙ্গিক খরচ ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব রাখেন।
গত বছর জুনে বাজেট ঘোষণার আগে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেমব্লার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ৮১% কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছিল।
রেজিস্ট্রেশন ফি, রোড ট্যাক্স, শুল্ক ও অন্যান্য চার্জসহ মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় গড়ে প্রায় ২২ হাজার টাকা, যা সর্বাধিক ইঞ্জিনের ক্ষমতাসম্পন্ন ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের দামের প্রায় ২৫ শতাংশ। অ্যাসোসিয়েশন ৪ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করতে চাচ্ছে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে প্রায় ১০টি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল নির্মিত বা অ্যাসেম্বল হচ্ছে- রানার, হিরো, বাজাজ, হোন্ডা, টিভিএস, ইয়ামাহা, সুজুকি, বেনেলি, জোংশেং ও লিফান। আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের সঙ্গে মোটরসাইকেল প্রস্তুত করছে।
বিএমএএমএ'র মতে, এ খাতে এখন পর্যন্ত প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা প্রায় দুই লাখ লোককে প্রত্যক্ষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে চাকরি দেবে।
মোটরসাইকেল শিল্প দেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর ডিউটি, ট্যাক্স ও ভ্যাট হিসাবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা অবদান রাখে। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন ফি থেকেও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে এখানে।
বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে মোট মোটরসাইকেল বিক্রির পরিমাণ ছিল দুই লাখের নিচে; ২০১৯ সালে তা বেড়ে সাড়ে পাঁচ লাখে দাঁড়িয়েছে।