খাদ্য মজুদ অর্ধেকে, আমদানি বাড়াচ্ছে সরকার
সরকারি গুদামে খাদ্য শস্যের মজুদ অর্ধেকে নেমে এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত আমদানির উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টন আমদানির জন্য লক্ষ্যে ২.৫ লাখ মেট্রিক টনের আন্তর্জাতিক টেন্ডার হয়ে গেছে। বাকি ৩.৫ লাখ মেট্রিক টন আসবে জি টু জি উদ্যোগে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে ধান ও গমের মজুদ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ৮ লাখ মেট্রিক টনের নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ পরিসংখ্যানে জানা যায়, মজুদ নেমে এসেছে ৭ লাখ মেট্রিক টনের নিচে।
মজুদ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মজুদ বাড়াতে সর্তকভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টন আমদানির উদ্যোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।'
আপাতত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য হলো ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা। এর মধ্যে ৬ লাখ টন নিশ্চিত হয়ে গেছে। কোনো কারণে আসন্ন বোরো মৌসুমে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমদানি আরো বাড়ানো হতে পারে বলে তিনি জানান। ক্ষতি না হলে ১০ লাখেই সীমাবদ্ধ থাকবে তার মন্ত্রণালয়।
সতর্ক আমদানির প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব বলেন, আমদানির জন্য যেন কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখা হবে। কারণ, গত বছর কৃষকরা বোরোতে ভালো দাম পেলেও ২০১৯ সালে পায়নি। তাই আসন্ন বোরোতে ভালো দাম নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
সরকারি পর্যায়ে আমদানির উদ্যোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে বেসরকারিখাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আমদানি নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন খাদ্য সচিব। তিনি জানান, বেসরকারি পর্যায়ে পূর্বের আমদানি অভিজ্ঞতা ভালো না হওয়ায় এবার সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনতে শুল্ক হ্রাস করায় এলসি খোলার পরিমাণও বেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে চাল আমদানি করতে ৪৪.২৫ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ২.২২ মিলিয়ন ডলারের।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, চাল আমদানির ক্ষেত্রে যত ধরনের পলিসি সহায়তা দরকার, তা করতে হবে।
মজুদ না বাড়লে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তারা বলছেন, বাজারে খাদ্যশস্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে চাল বিক্রি কারযক্রম অব্যাহত রাখা কিংবা কোনো ধরনের দুর্যোগ হলে নিজস্ব মজুদ ব্যবহার করে থাকে সরকার।
যেহেতু মজুদ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, তাই দ্রুত তা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন ডা. মঞ্জুর হোসেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খাদ্য মজুদ ১৩.৫ লাখ মেট্রিক টনের নিচে নেমে গেলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে সরকার যেহেতু আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে, তাই আসন্ন বোরো মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্থ না হলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির তেমন কোনো আশঙ্কা নেই।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, যদিও খাদ্য মুজদ অর্ধেকে নেমে গেছে, কিন্তু সরকারের উদ্যোগের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে না।
খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ মানুষের কাছে এখন পর্যাপ্ত খাবার আছে।
এদিকে, আমদানির উদ্যোগ বাড়লেও ধান চাল সংগ্রহে পিছিয়ে রয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সরকারের ধান, চাল ও গম সংগ্রহ কমেছে ১.৩৭ লাখ মেট্রিক টন।
বন্যার কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়া এবং আমন ধান সংগ্রহের সময় ভালো দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক ধান বিক্রি না করে মজুদ রেখেছেন বলে মনে করেন ড. জাহাঙ্গীর আলম।
চলতি অর্থবছরের জন্য আমন মৌসুমে ৮.৫ লাখ টন ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণায়। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে আমন ধান সংগ্রহ হয়েছে, তা চাল আকারে মাত্র ৬১ হাজার মেট্রিক টন। সংগ্রহের সময়সীমা গত ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব বলেন, ধান চাল সংগ্রহে যে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, কৃষক বাজারে তারচেয়ে ভালো দাম পাচ্ছে। তাই সরকারের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় এবার ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। তবে এটি কোনো ধরনের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে না।