স্বাস্থ্যসেবার উচ্চমূল্যে চিকিৎসা বঞ্চিত ৪০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক
দেশের ৪২ লাখ পোশাক শ্রমিকের ৪০ শতাংশই উচ্চমূল্যের কারণে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। অসুস্থতার শিকার এসব শ্রমিকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ 'ইন্সুরেন্স ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন' গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আজ শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) "পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ফর হেলথ ইন্সুরেন্স মডেল ইন আরএমজি সেক্টর অব বাংলাদেশ" শীর্ষক এক সমন্বয়ক বৈঠকে এব্যাপারে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে । অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ৪৩ শতাংশ পোশাক শ্রমিক বছরে কোন না কোন সময় অসুস্থতায় ভোগেন। পরিশ্রম ও কাজের পরিবেশের উপর তাদের অসুস্থতার ধরন নির্ভর করে। অন্যদিকে, মাত্রাতিরিক্ত সেবা মূল্যের কারণে তারা ঠিকমতো চিকিৎসা পায় না। এমনকি সরকারি হাসপাতালগুলোতেও তাদের চিকিৎসা নিতে নানান বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
এই অবস্থায় বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করার বিকল্প নেই, উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দেশের প্রায় অর্ধকোটি জনসংখ্যা এখাতে কাজ করলেও এক শতাংশের মতো শ্রমিক এখন স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আছে।
বাকিদের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসার তেমন গতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশাবাদী সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কাজ করা সম্ভব হলে তাদের জীবন-মানে পরিবর্তন আসবে।
অসুস্থতার কারণে নির্ধারিত ছুটির বাইরে গড়ে প্রতি মাসে আরও চার দিন বিনা বেতনের ছুটির কবলে পড়তে হয় এই শ্রমিকদের। যেটা তাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
শ্রমিকদের জ্ন্য এখন যে ধরনের বিমা সুবিধা চালু আছে, তার অধিকাংশ পাইলট প্রকল্প হিসেবে আছে। এগুলোকে স্থায়ী রুপ দিতে কাঠামো তৈরির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এছাড়া, প্রান্তিক এই শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ –সহ সকল সংস্থাকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা বলেন, চিকিৎসার পেছনে পোশাক শ্রমিকদের আয়ের একটি মোটা অংশ খরচ হয়ে যায় এবং উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসাবে দেশে পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা সুবিধার আওতায় আনা গেলে একদিকে যেমন শ্রমিকরা লাভবান হবে। পক্ষান্তরে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে। যেটা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
কোভিড আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে পোশাক শিল্পের মতো উৎপাদনশীল এবং রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমার পরিধি বাড়ানো জরুরি, বলে মনে করেন তিনি।
মিটিংয়ে বৈশ্বিক বাজারে দেশের আরএমজি সেক্টরের গুরুত্ব বাড়াতে বিশেষ 'ইন্সুরেন্স ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন' গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি নীতি-নির্ধারকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। অনুষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- এসএসভি বাংলাদেশ।