চীনে অ্যাপলের পণ্য বিক্রয়ের ধুম অব্যাহত থাকবে কি?
গত মাসে অ্যাপল যখন চীনে তার বিক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করল, ইতিমধ্যে তা তার ডিসেম্বর প্রান্তিকে আইফোন-১২ বিক্রয়ের রেকর্ডটি ছড়িয়ে গেছে।
বৃহত্তর চীন অঞ্চলে আইফোন-১২ এর বিক্রয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৭% বৃদ্ধি পায়। ফলে ডিসেম্বর প্রান্তিকে আইফোন-১২ ফোনের কল্যাণে চীনের হ্যান্ডসেট বাজারে অ্যাপলের অংশীদারিত্ব ২০ শতাংশের ওপরে উঠে যায়।
এটা সত্যি যে চীনের বাজারে মার্কিন টেক-জায়ান্ট কোম্পানিটি প্রত্যাশার চাইতেও বেশি পণ্য বিক্রি করেছে তবে আইফোনের বাজার সর্বদা এইরকম শক্তিশালী থাকবে সে বিশ্বাস ধরে আইফোনের নির্মাতারা বসে নেই।
তবু বিশ্লেষকদের মত, সাম্প্রতিক প্রান্তিকে চীনে অ্যাপলের যে সাফল্য দেখা যাচ্ছে তা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।
সিনোভাস ট্রাস্ট কোম্পানির সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার ড্যান মরগান বলেন, " একসময় চীন অ্যাপলের জন্য একপ্রকার কাঁটা ছিল। কিন্তু এখন দোলকের গতি অন্য দিকে ঘুরে গেছে বলতে হবে।"
আইফোনের মূল বাজার এখন চীন !
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীনে বিক্রয় পরিস্থিতি সর্বদা স্থিতিশীল ছিল না, তবে এই বাজার অ্যাপলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শপিং এবং ব্যাংকিংয়ের মতো পরিষেবার জন্য চীনা ভোক্তাদের কাছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন অনেক জনপ্রিয়। ফলে অ্যাপল এর অ্যাপ স্টোর এবং সফটওয়্যার পরিষেবাগুলি থেকে বর্ধনশীল আয় অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে চীনে। তবে এখনও প্রবৃদ্ধির যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে - গার্টনার এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে অ্যাপলের বৈশ্বিক স্মার্টফোন মার্কেট শেয়ার ছিল ১৪.৮%, তবে চীনে এটি ছিল মাত্র ১০.১%।
ওয়েডবুশ বিশ্লেষক ড্যান আইভিস গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে এক বিবৃতিতে জানান, আসন্ন বছরে আইফোনের মোট আপগ্রেডের ২০ শতাংশই চীনের জন্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীন এখনো অ্যাপলের সাফল্যের পেছনে একটি "মূল উপাদান" হিসাবে পরিগণিত হয়, সেটিও তিনি যোগ করেন।
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক সম্প্রতি একজন চীনা কলেজ শিক্ষার্থী ও টেক ইনফ্লুয়েন্সারকে একটি বিরল সাক্ষাতকার দিয়েছেন, যা তরুণ চীনা গ্রাহকদের মধ্যে আরও বেশি সমর্থন তৈরী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কুক বলেন, কিউআর কোড স্ক্যানার এবং নাইট মোডসহ অ্যাপলের অনেক পণ্যের ফিচারই চীনা গ্রাহকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
"আমরা সেখানে আমাদের গ্রাহকদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনি"।
চীন থেকে প্রচুর প্রতিক্রিয়া পান বলেও জানান অ্যাপলের সিইও।
রেকর্ড সংখ্যক আপগ্রেডার
চীনে অ্যাপলের বিক্রয় প্রবৃদ্ধির পেছনে প্রধান অবদানকারী হিসেবে আইফোন-১২ এর নাম উঠে আসলেও কুকের দাবি, আইপ্যাড এবং অন্যান্য পণ্যগুলিও এতে অবদান রেখেছে।
অনেক দেশেই ভোক্তারা আইফোন কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের ব্যাটারির জীবনীশক্তি বৃদ্ধি এবং নতুন করে আইফোনের গ্রাহক আকর্ষণের মত বৈশিষ্ট্য না থাকা ভোক্তাদের অনাগ্রহের অন্যতম কারণ। কিন্তু অক্টোবর মাসে ফাইভ-জি সহ আইফোন-১২ বাজারে ছাড়া হলে গ্রাহকেরা আপডেটেড ভার্সনের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে!
চীনে আইফোন-১২ জনপ্রিয় হয়ে উঠার পেছনে বিশেষ কিছু কারণ ছিল। ছুটির মৌসুমে 'রেকর্ড সংখ্যক আপগ্রেডার' থাকা একটি কারণ বলে কুক মনে করেন। আবার চীনের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বেশ শক্তিশালী।
তাছাড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় মহামারী পরবর্তী মন্দা থেকেও চীনের অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার লাভ করেছে - এটি বর্তমানে পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার চেয়ে প্রায় দুই চতুর্থাংশ এগিয়ে আছে বলে মনে করেন গার্টনার বিশ্লেষক অ্যানেট জিম্মারম্যান। সুতরাং এর গ্রাহকদের নতুন ডিভাইসে ব্যয় করার মত নগদ হাতে থাকার সম্ভাবনাও বেশি।
গার্টনারের মতে, অ্যাপল ২০২০ সালে চীনে আগের বছরের চাইতে ৮% বেশি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে এবং এখানে আইফোন-১২ বিক্রি শুরুর পর মাত্র দুই মাসের হিসেব অন্তর্ভুক্ত।
চীনা প্রতিযোগী হুয়াওয়ের 'সংগ্রাম' থেকে অ্যাপলও উপকৃত হতে পারে। সাম্প্রতিক মার্কিন নীতি আমেরিকান শীর্ষ স্তরের প্রযুক্তিতে হুয়াওয়ের অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিয়েছে; গুগল থেকে সফটওয়্যার ব্যবহারের পথও হুয়াওয়ের জন্য বন্ধ। ফলস্বরূপ গ্রাহকদের কাছে এসব স্মার্টফোন আবেদন হারাচ্ছে।
আইডিসির তথ্য অনুসারে চীনের স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপলের শেয়ারের দাম ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রায় ৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে, অন্যদিকে একই সময়ে হুয়াওয়ের কমেছে দশ শতাংশেরও বেশি।
চীনে অ্যাপলের এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে কিনা তার জন্য বিশ্লেষকবৃন্দ আইফোন-১২ এর আপগ্রেডের চক্রের উপর নির্ভর করে থাকবেন।
সিনোভাস মরগান বলেন, "আমি বিশ্বাস করি এই ডিসেম্বর-চীন সংখ্যা কোন দ্রুত স্খলন নয়। আমি আশাবাদী যে আমরা বাস্তবে এই চক্রটি পাব এবং সাম্প্রতিক প্রান্তিকটি তারই প্রমাণ"।
শেষ পর্যন্ত অ্যাপলের বাজার দখলের এ গতি কতদিন অব্যাহত থাকে সে তো সময়ই বলবে।
- সিএনএন অবলম্বনে