দেশে ৩৪.২ শতাংশ বেসরকারি চাকরিজীবীর আয় মহামারি পূর্ব অবস্থায় ফেরেনি: সানেম
বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় আয় কমে যাওয়া ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ কর্মরত জনগোষ্ঠীর উপার্জন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অন্যদিকে, স্ব-কর্মসংস্থান নির্ভর উপার্জনকারীদের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশের উপার্জনও করোনা পূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেনি।
সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, সাবেক বেতনভুক্ত ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কর্মচারীই এখন পর্যন্ত বেকার।
এছাড়া, জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ । অন্যদিকে, খুলনায় বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
মহামারির সময় আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের ২০ শতাংশ তাদের চাকরি হারায় বলেও উল্লেখ করা হয় এই প্রতিবেদনে।
আজ বুধবার (১০ মার্চ) ভার্চুয়াল এক প্রেস কনফারেন্সে "কোভিড-১৯ ইমপ্যাক্ট অন লেবার মার্কেট অ্যান্ড মাইগ্রেশন: রেজাল্টস ফ্রম সানেম'স সার্ভে"- শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এবছরের, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
গবেষণা জরিপে অংশগ্রহণকারী ২৮৪৫টি পরিবারই ছিল অ-অভিবাসী। অন্যদিকে, ২৩০টি পরিবার দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করে। এছাড়া, ২৭৩টি পরিবার ছিল অভিবাসী।
অ-অভিবাসী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে, ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ ছিলেন বেতনভুক্ত কর্মচারী, ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিলেন স্বনির্ভর এবং ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ছিলেন সম্পূর্ণ কর্মহীন।
প্রধান যেসব বেতনভুক্ত খাতে আয় এখনও স্বাভাবিক হয়নি তার মধ্যে আছে- পরিবহন খাত (৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ), নির্মাণ বাণিজ্য (৪০ দশমিক ৫ শতাংশ), কৃষি, বন এবং মৎস্য খাত (৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ), তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী (৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ), নন-আরএমজি প্রস্তুতকারক (৩২ দশমিক ৭ শতাংশ) এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা (১৮ দশমিক ৭ শতাংশ)।
অন্যদিকে, প্রতিবেদনটির তথ্যানুযায়ী, স্ব-নির্ভর উপার্জনকারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পরিবহন (৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ), হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট (৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ), প্রস্তুতকারক (৪২ দশমিক ২ শতাংশ), পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা (৩৯ শতাংশ), কৃষি, বন এবং মৎস্য (৩১ দশমিক ৫ শতাংশ) – প্রভৃতি খাতে উপার্জন এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
ঢাকায়, ৩১ দশমিক ১ শতাংশ চাকুরিজীবী এবং ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ স্বনির্ভর মানুষের উপার্জনই এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি।
প্রতিবেদনটিতে, গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বরে, অংশগ্রহণকারীদের পেশা পরিবর্তনের দিকেও আলোকপাত করা হয়। সেসময়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মজীবীই তাদের পেশা পরিবর্তন করেন।
সানেমের গবেষণা পরিচালক ডক্টর সায়েমা হক বিদিশা প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যগুলো উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর সেলিম রায়হান আয়োজনটি পরিচালনা করেন।
আমাদের অধিকাংশ নীতিমালাই পণ্যনির্ভর বাজার কেন্দ্রিক বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান। "শ্রম বাজার এবং মূলধন নির্ভর বাজারের উপর দৃষ্টি না দিলে, মহামারি কালীন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আরও ধীর গতিতে আগাবে," বলেন তিনি।