প্রথম লাক্সারী ব্র্যান্ড হিসেবে চীনা তোপের মুখে এবার বারবেরি
সদ্যই খবর এসেছিল, চীনের সমালোচনা করে জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম এবং নাইকি তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। এবার এ তালিকায় নাম লেখালো ইংল্যান্ডের লাক্সারী ব্র্যান্ড বারবেরি। সম্প্রতি ব্র্যান্ডটির সাথে চুক্তি বাতিল করেছে এর চীনা ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। এছাড়া চীনের জনপ্রিয় একটি ভিডিও গেমের চরিত্রের পোশাক থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বারবেরির নিজস্ব নকশা।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে তুলা উৎপাদন কাজে উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষদের জোরপূর্বক বাধ্য করা প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানানোয় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর উপর এখন ক্ষোভ ঝারছে চীন।
জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের বিষয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বেশকিছু পশ্চিমা দেশ চীনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গত সপ্তাহে এ প্রদেশ নিয়ে 'মিথ্যা এবং বিভ্রান্তি' ছড়ানোর অভিযোগে চীন যুক্তরাজ্যের কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর পালটা নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
বারবেরি 'বেটার কটন ইনিশিয়েটিভ' নামক একটি উদ্যোগের সাথে জড়িত যা টেকসই তুলা উৎপাদন করতে বিশ্বব্যাপী প্রচার চালিয়ে থাকে। গত অক্টোবরেই কোম্পানিটি ঘোষণা দিয়েছিল, জিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং এ অঞ্চল থেকে তারা তুলা সংগ্রহ করবে না।
বৃহস্পতিবার বারবেরির ব্র্যান্ড এম্বাসেডর এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত চীনা অভিনেত্রী ঝাউ ডংইউ কোম্পানিটির সাথে চুক্তি সমাপ্তির ঘোষণা দেয়। অভিনেত্রীর এজেন্সি থেকে জানানো হয়, উইঘুরের তুলা উৎপাদনের বিষয়ে বারবেরি "নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করে নি"।
চায়নিজ টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের জনপ্রিয় ভিডিও গেম "অনার্স অফ কিংস" এর বিভিন্ন চরিত্রের পরিহিত পোশাক থেকেও বারবেরির নকশা সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে গেমটির অফিশিয়াল উইবো (চীনা সামাজিক মাধ্যম) একাউন্টের একটি পোস্ট থেকে জানানো হয়।
এ সম্পর্কে রয়টার্সের পক্ষ থেকে বারবেরির কাছে মন্তব্যের জন্য আবেদন করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত এবং মিশর থেকে আন্তর্জাতিক এ কোম্পানিটি তুলা সংগ্রহ করে থাকে।
এইচ অ্যান্ড এম, নাইকি, এডিডাসের মত বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর সাথে ইতিমধ্যে বহু চীনা তারকা সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন এবং বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চুক্তি বাতিল করেছে।
জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন এবং দমন-পীড়নের অভিযোগে জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ জানিয়ে আসছে। চীনের দাবি, উইঘুররা কট্টরপন্থী এবং জিহাদি নেটওয়ার্কের সম্পর্কযুক্ত।
নভেম্বর মাসে ব্রিটিশ আইনজীবিদের উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠিতে বারবেরি জানায়, তাদের জিনজিয়াং প্রদেশের সাথে কোনরূপ সরবরাহ বা ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই এখন। জোরপূর্বক বা বাধ্য করে শ্রম আদায়ের মত আধুনিক দাসত্বকে বারবেরি সমর্থন করে না বলেও সে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
হংকংয়ের আইনজীবি রেজিনা আইপি জানান, তিনি আর বারবেরির কোন পণ্য ক্রয় করবেন না।
নিজের টুইটার একাউন্টে তিনি লেখেন, "বারবেরি আমার অন্যতম প্রিয় ব্র্যান্ড। কিন্তু আমি এদের আর কোন পণ্য কিনছি না। জিনজিয়াং সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারকারী কোম্পানিগুলোকে বর্জনের সিদ্ধান্তে আমি আমার দেশের পক্ষে"।
- রয়টার্স অবলম্বনে