করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি: আইসিইউ বেড ও বিশেষজ্ঞের সঙ্কট
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলো করোনার রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। গুরুতর রোগী, যাদের নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন তাদের আইসিইউ বেড পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১০৮টি। তার মধ্যে খালি আছে মাত্র চারটি।
অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড রয়েছে ১৮৮টি। তারমধ্যে রোগী ভর্তি আছে ১৪৪টিতে। সেখানে আইসিইউ বেড ফাঁকা আছে ৪৪টি ।
স্বল্প আয়ের লোকেরা সরকারি হাসপাতালকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কেননা সেখানে বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় চিকিৎসার খরচ অনেক কম।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আইসিইউ বেডের তীব্র ঘাটতির অর্থ হলো গুরুতর রোগীদের মধ্যে খুবই সামান্য একটি অংশই কেবল আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৫৩৫৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৩৫৮ জনের শরীরে নতুন করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যা দেশে করোনা শনাক্তের পর একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ১১ হাজার ২৯৫ জনে পৌঁছেছে।
এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে আরও ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন ইউএনবিকে বলেন, এখন যেভাবে করোনা রোগী বাড়ছে তাতে সামাল দেয়া খুবই কঠিন হবে।
সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড
১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১৬টি করে আইসিইউ বেড, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি, ঢাকা মেডিকেলে ১০টি, শেখ রাসেল গ্যাসট্রোলিভার হসপিটালে ১৬টি, ফুলবাড়িয়া সরকারি হাসপাতালে ৬টি, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ১৫টি আইসিইউ বেড রয়েছে।
শেখ রাসেল গ্যাসট্রোলিভার হসপিটাল এবং রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ২টি করে আইসিইউ বেড খালি রয়েছে।
এদিকে করোনার প্রকোপ বাড়ায় সরকারি হাসপাতালের সাধারণ বেডও অপ্রতুল হয়ে আসছে। ২৪৬১টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ২১২৭টিতে রোগী ভর্তি আছে।
বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে আইসিইউ বেড রয়েছে ৯টি, ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হসপিটালে ৩০টি, স্কয়ার হসপিটালে ১৯টি, ইউনাইটেড হসপিটালে ২২টি, এভার কেয়ার হসপিটালে ৪০টি, আজগর আলী হাসপাতালে ৩২টি, ইবনেসিনা হসপিটালে ৫টি, ইমপালস হাসপাতালে ৩৫টি, এএমজেড হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।
আনোয়ার খান মডার্ন হসপিটালে ৮টি, স্কয়ার হসপিটালে ৫টি, ইউনাইটেড হসপিটালে ৮টি, এভার কেয়ার হসপিটালে ৬টি, আজগর আলী হাসপাতালে ১২টি, ইবনেসিনা হসপিটালে ১টি, ইমপালস হাসপাতালে ৩টি এবং এএমজেড হাসপাতালে ২টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে।
৯২৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৫২৮টিতে রোগী ভর্তি আছে।
কোভিড চিকিৎসার জন্য আইসিইউ বাড়ানো হচ্ছে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছিলেন, করোনা রোগী দিন দিন বাড়ছে। যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় আর এভাবে রোগী বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের ব্যবস্থাপনাও কুলাবে না।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান ইউএনবিকে বলেন, এই মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ কমাতে হলে স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানতে হবে। সরকার যে নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেটি মেনে চলতে হবে। তাহলে কোভিড আক্রান্ত কমে আসবে। কোভিড আক্রান্ত কমে আসলে আইসিইউ শয্যায় ভর্তির সংখ্যাও কমে আসবে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, তারা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ স্থাপনের উপর জোর দিচ্ছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হলে আইসিইউ স্পেশালিস্টও বাড়াতে হবে। 'আমাদের আইসিইউ স্পেসালিস্ট খুবই কম,' বলেন তিনি।
অধ্যাপক আমিন বলেন, যেসব জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা একেবারেই নেই, সেখানে আইসিইউ শয্যা তৈরির একটি প্ল্যান সরকারের রয়েছে। সেটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। 'জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড স্থাপন করা গেলে ঢাকায় (হাসপাতালে) চাপ কমে আসবে,' বলেন তিনি।