বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের জমকালো উদ্বোধন
হঠাৎ-ই করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেছে। হুহু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কঠিন এই সময়ের মাঝেই শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস। দেশের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞ পূর্ব নির্ধারিত সময়েই শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পর্দা উঠলো বাংলাদেশের অলিম্পিক খ্যাত এই আসরের।
আসরটি মাঠে থেকেই উদ্বোধন করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। সন্ধ্যা ৭টা ৩২ মিনিটে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ গেমস গত বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবারও করোনা পরিস্থিতির কারণে গেমসের সফল আয়োজন নিয়ে আছে সংশয়। যদিও আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) বিশ্বাস, সফলভাবে বাংলাদেশ গেমস সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিস্থল থেকে বাংলাদেশ গেমসের মশাল প্রজ্বলন করেন বিওএ'র সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মশাল প্রজ্বলন করে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। এরআগে ক্রীড়াবিদদের পক্ষে শপথ পাঠ করান দেশসেরা আর্চার রোমান সানা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে সাড়ে ৫টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের খেলাধুলার উল্লেখযোগ্য সাফল্য গাঁথা। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে বেজে ওঠে জাতীয় সঙ্গীত। এরপর শুরু হয় অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনী। খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা মাঠে প্রবেশ শুরু করেন সন্ধ্যা ৭টা থেকে।
এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিওএ সভাপতি ও গেমসের সাংগঠনিক কমিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এ ছাড়া বক্তব্য রাখবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এরপর বক্তব্য ও বঙ্গবন্ধু গেমসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর কিছুক্ষণের জন্য লেজার শো ও আতশবাজি হয়। এই অংশ শেষে মশাল হাতে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। এরপর সামনে আসে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের মাসকট 'কপোত'। মাঠ প্রদক্ষিণ করে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায় বঙ্গবন্ধু গেমসে মাসকট 'কপোত'।
এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে শিল্পী আরিফের নেতৃত্বে একটি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা করেন কয়েকজন তরুণ শিল্পী। সমবেত সঙ্গীতের পর বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন প্লটের ওপর ভিত্তি করে মঞ্চে দেখানো হয় সেসব ঐতিহাসিক মূহূর্তের কাল্পনিক দৃশ্য। এই অংশে উঠে আসে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ আরও বিভিন্ন দিক।
এরপর সমবেত কণ্ঠে দেশাত্ববোধক গান পরিবেশনা করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী, রফিকুল আলম, শাহীন সামাদ, বুলবুল মহানবীশ ও ডালিয়া বুলবুল। এর কিছক্ষণ পর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। নিজের গাওয়া দুটি দেশাত্ববোধক পরিবেশনা করেন এই গুণী শিল্পী। এরপর সঙ্গীত পরিবেশনা করেন রবীন্দ্র সঙ্গীতের খ্যাতিমান শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এরপর শুরু হয় চোখ ধাঁধানো লেজার শো ও আতশবাজি। প্রায় ১২ মিনিট ধরে চলে এই পর্ব। এই পর্ব দিয়ে শেষ হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস আয়োজনে বাজেট ধরা হয়েছিল ৩৮ কোটি টাকা। তবে তা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সরকার থেকে ১৫ কোটি টাকা পাচ্ছে বিওএ। ৯ জেলার ২৯টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠেয় এই ক্রীড়াযজ্ঞে ৩১ ডিসিপ্লিনে ৫ হাজার ৩০০ ক্রীড়াবিদ অংশ নেবেন। আসরের মোট পদকসংখ্যা ১ হাজার ২৭১টি। এর মধ্যে স্বর্ণপদক সংখ্যা ৩৭৮টি।