বডিবিল্ডার থেকে ঢাকাই সিনেমার নায়ক
'৭০ ও '৮০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়ক ওয়াসিম। দীর্ঘ অসুস্থতার পর শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
নায়ক হিসেবে দুর্দান্ত সফল ছিলেন ওয়াসিম। ১৯৭৪ সালে 'রাতের পর দিন' চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার। তবে তার আগে হতে চেয়েছিলেন বডিবিল্ডার। সিনেমায় আসার পর বডিবিল্ডার থেকেই হয়ে উঠলেন নায়ক ওয়াসিম। সমগ্র অভিনয় জীবনে ১৫২টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন ওয়াসিম।
জানা যায়, ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুর জেলার আমিরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন ওয়াসিম। তার পারিবারিক নাম মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। কলেজের পড়াকালীন মেজবাহ সবার কাছে পরিচিত ছিলেন 'বডিবিল্ডার' হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি বডিবিল্ডিংয়ের জন্য 'মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান' খেতাবও অর্জন করেছিলেন। সিনেমায় আসার পর এই বডিবিল্ডার মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ থেকে হয়ে উঠলেন নায়ক ওয়াসিম।
১৯৭২ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এস এম শফীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। শফীর আগ্রহেই ১৯৭২ সালে তার পরিচালিত 'ছন্দ হারিয়ে গেল' চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হন তিনি। এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন।
১৯৭৪ সালে আরেক প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা মোহসিন পরিচালিত 'রাতের পর দিন' চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার।
১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়াসিম অভিনীত ও এস এম শফী পরিচালিত 'দি রেইন' তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। পৃথিবীর ৪৬টি দেশে 'দি রেইন' মুক্তি পেয়েছিল।
'৭০ আর '৮০ এর দশকজুড়ে ফোক ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশন চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। ওয়াসিমের নামে সিনেমা হলে উপচে পড়ত দর্শক।
ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান, মিস লোলিতাসহ প্রায় দেড় শতাধিক সুপার হিট ছবির নায়ক এই জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা।
কিন্তু ২০০৯ সালের পর সিনেমা থেকে নিজেকে আড়াল করে নেন এ মেগাস্টার।
তবে ওয়াসিম ছবি প্রযোজনাও করেছেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ডব্লিউ আর প্রোডাকশন। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে হিসাব চাই, মোহন বাঁশি, নয়া তুফান, সীমাবদ্ধ ইত্যাদি। অভিনেতা হিসেবে তুমুল সাফল্য পেলেও প্রযোজক ওয়াসিম খুব একটা সফল হতে পারেননি।
অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করলেও তিনজন নায়িকার সঙ্গে অভিনীত ছবি সবচেয়ে বেশি আলোর মুখ দেখেছে। এরা হলেন অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষ ও শাবানা।
ওয়াসিমের 'দি রেইন' ছবিতে নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া। পরবর্তী সময়ে ওয়াসিম-অলিভিয়া জুটি বেঁধে আরও কিছু ছবিতে অভিনয় করেন। 'বাহাদুর' এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন প্রভৃতিও সফল হয়েছিল। 'কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানার অভিনীত 'রাজ দুলালী' ছবিতে ওয়াসিমের অভিনয় দর্শকনন্দিত হয়। এছাড়া অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে জুটি বেঁধে করা ওয়াসিমের ছবি 'সওদাগর', 'নরম গরম', 'রসের বাইদানী' ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়।
নায়ক ওয়াসিমের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। ওয়াসিম বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। জায়েদ খান জানান, ওয়াসিম দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের জটিল সমস্যায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিরবিদায় নিলেন ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় এই নায়ক।
রবিবার বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের এই সুপারস্টারকে দাফন করা হবে।
- সূত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য উৎস