সবজির দাম কমলেও বেড়েছে তেল ও পেঁয়াজের দাম
- সয়াবিন তেলের লিটারে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা।
- পিয়াজের কেজি ৪৫ টাকা, আলু ২৫ টাকা।
- তরমুজের দাম কমছেই না, কেজির চেয়ে পিসপ্রতি দাম বেশি।
- কলা, বেলের দাম বাড়তি
- মাছ, মাংস, মুরগি ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত
চলমান লকডাউন এবং রমজান মাসে রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারগুলোতে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে কমেছে শাক-সবজির দাম তবে বেড়েছে ভোজ্য তেলসহ (সয়াবিন) পেঁয়াজ ও আলুর দাম।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে পাঁচ টাকা, খোলা সয়াবিন ও পাম সুপারে বেড়েছে তিন টাকা। আলু কেজিতে ২-৫ টাকা, পেঁয়াজ ৫-৭ টাকা বেড়েছে।
রমজানের শুরুতে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক সবজিসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম ২ থেকে তিনগুণ বেড়ে গেলেও গত দুই সপ্তাহে কিছু কিছু সবজির দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে বেগুন, শসাসহ অধিকাংশ শাক-সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় এগুলোর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
বর্তমানে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় এবং বিক্রি কম হওয়ায় সবজির বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
শুক্রবার রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজার, কাঁঠাল বাগান, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও মগবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
অন্যান্য সবজির মধ্যে শসা গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা থেকে কমে ৪০ টাকা, লেবু ৫০ থেকে ১২০ টাকায় হালিপ্রতি বিক্রি হলেও এখন সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকা হালি।
এছাড়াও দাম কমেছে, টমেটো, পটল, চিচিঙ্গা, ঢেড়শ, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, করলা, লাউ, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতির।
তবে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পেঁপে, মুলাসহ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। কাঁচা পেঁপের কেজি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা, মুলার কেজি ৪০ কেজি যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা। ফুলকপি প্রতি পিস ৪০, বাধাকপি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
হাতিরপুল কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল বাসির টিবিএসকে বলেন, 'রমজানের শুরুতে সবজির দাম বাড়লেও গত কয়েকদিনে দাম কমেছে বেশ অনেকটাই। এদিকে ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম। গত এক বছর ধরেই ব্যবসা খারাপ এর মধ্যে চলমান লকডাউনে দোকানের খরচ উঠানোই কষ্ট হয়ে যায়'।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ ৩৫ থেকে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কোনো কোনো খুচরা দোকানে ৪৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে। আলু ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
খুচরা বাজারে বোতলের গায়ে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৩৯ টাকা থাকলেও তা কোথাও ১৪০ টাকা আবার কোথাও ১৪৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে অনেক দোকানে বোতলের গায়ের দামের চেয়ে কমে ১৩৫ টাকা লিটারও বিক্রি করেছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, তেলের কোম্পানির লোকজন জানিয়ে দিয়েছেন যে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে। নতুন বোতল আসলে সেখানে বাড়তি দাম লেখা থাকবে।
কম মূল্যে কেনা তেলের বোতল বেশি দামে বিক্রি করছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মগবাজারের এক দোকানী সালমান হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'তেলের বাজার বেড়েছে এখন নিলে এ দামেই নিতে হবে'।
খোলা সয়াবিন তেলের কেজি কয়েকদিন আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হলেও আজ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৭ টাকায়। ১২০ টাকা কেজির পাম সুপারের দাম বেড়ে হয়েছে ১২৭ টাকা।
তেল, পেয়াজ ও আলুর দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তাসলিমা খানম নামের এক ক্রেতা টিবিএসকে বলেন, 'তেলের গায়ে লেখা ১৩৯ টাকা কিন্তু কিনতে হয়েছে ১৪৫ টাকা দিয়ে। প্রতিনিয়ত এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাবে। রমজানে সকল দেশে দাম কমে আর আমাদের দেশে কয়েক ধাপে দাম বাড়ে'।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা আদিল হক টিবিএসকে বলেন, 'গত ২/৩ দিন ধরে পেঁয়াজ ও আলুর দাম বেশি। আলু ২০ টাকা ও পিয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। খুচরা বাজারে দাম আরও বেশি'।
তবে আদা, রসুনসহ অন্যান্য মসলার দাম আগের মতোই রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া চাল, মাছ, মাংস, মুরগি ও ডিমের দামও আগের মতোই আছে। তবে ক্রেতা কমেছে মাংস ও মুরগির বাজারগুলোতে।
তরমুজ কোথাও কেজিতে আবার কোথাও পিস হিসেবে, দাম কমেনি
তরমুজের দাম বেশি রাখায় এবং কৃষকদের কাছ থেকে পিস হিসেবে কিনে কেজি দরে বিক্রি করায় ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিন অভিযান চালানোর পরে তরমুজ ব্যবসায়ীরাও কৌশলে বেশি দামে বিক্রি করছে।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি তাদেরকে অতিরিক্ত দামে পাইকারি বাজার থেকে তরমুজ কিনতে হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়িতে করে তরমুজ আনার খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে যার ফলে দাম বেড়ে গিয়েছে বলেও দাবি পাইকারী বিক্রেতাদের।
রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে এক তরমুজ বিক্রেতা মো. মিজান হোসেনকে তরমুজের দাম জিজ্ঞেস করতেই বলেন, কেজি হিসেবে কিনবো নাকি পিস হিসেবে। সেক্ষেত্রে কেজিতে নিলে ৬৫ টাকা করে পড়বে বলেন তিনি। মাঝরি আকারের একটি তরমুজের দাম জিজ্ঞেস করলে তিনি পিস বলেন ৫৬০ টাকা। মেপে ৮ কেজি হওয়ায় কেজি হিসেবে হয় ৫২০ টাকা।
মিজান টিবিএসকে বলেন, 'বাজারে তরমুজ কম আসে আবার চাহিদা অনেক বেশি। তাই বেশি দামে বিক্রি না করলে আমাদের পোষাবে না। এছাড়া প্রতিদিনই ৪/৫ টা তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়, ইঁদুরে খেয়ে ফেলে আবার ছোট আকারের তরমুজ তো কম দামে বিক্রি করতে হয়। আমাদের চাপ দিয়ে তো লাভ নেই সব জায়গায়ই তরমুজের দাম বেশি'।
ফল কিনতে আসা শফিউর টিবিএসকে বলেন, 'তরমুজ দেখছি কেজিতে নিলে দাম কম হচ্ছে কিন্তু পিস হিসেবে দাম বাড়িয়ে বলে। যতো যাই করুক সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমছে না। রমজানের মধ্যে গরম বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছেমতো দাম রাখছে তরমুজ, বাঙ্গি, কলার'।
রাজধানীর ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলীর রুবেল এন্টারপ্রাইজের মো. দেলোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'সিজনের শেষের দিকে তরমুজের দাম একটু বেশি থাকে। ৬ কেজির তরমুজ ১৫০ টাকা দরে এবং ১৪ থেকে ২০ কেজির তরমুজ ৬৫০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। যেখানে বিক্রেতাদের সব খরচ নিয়ে ২০০ এবং ৭০০ টাকার বেশি পড়ার কথা না কিন্তু তারা সেগুলো বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। এখানে পাইকারি বাজারে প্রতি তরমুজে ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ হয় না, অধিকাংশ লাভই খুচরা বিক্রেতারা করে'।
কারওয়ান বাজারের এক খুচরা বিক্রেতা শামিম টিবিএসকে বলেন, 'ক্রেতারা হয়তো মনে করে তরমুজ বিক্রিতে আমরা অনেক ব্যবসা করি। কিন্তু সারাদিন পরিশ্রম করে আমাদের সবকিছু বাদ দিয়ে এক একজনের তেমন কিছু থাকে না। তরমুজ পচে যাওয়া, ভিতরে সাদা থাকা কিংবা অন্য কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া সবকিছুই আমাদের বহন করতে হয়'।
তরমুজ অধিকাংশ বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুধু তরমুজই নয় বাজারে ফলের চাহিদা বেশি থাকায় দেশি ফলের মধ্যে কলা, আনারস, বেলের দাম বেড়েই চলছে।
আকারভেদে প্রতিটি আনারস বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৬০ টাকায়, বেল প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এখানে প্রতিটি প্রায় ১০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
কলার মধ্যে সবরি কলার হালি ৫০ টাকা, সাগর কলা ২০ থেকে ৩০ টাকা, চাপা কলা ২৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে হালিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি।