মিতু হত্যা: সাবেক এসপি বাবুলসহ আরও ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ৭ জনকে।
বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুর পৌনে একটায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
মামলার বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া। এর আগে বেলা সোয়া ১২টার দিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমার পক্ষে পিবিআইয়ের দুজন কর্মকর্তা আদালতে নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের পর নতুন মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
বাকি সাত জন আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা (৪০), এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া (৪১), মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭), মো. আনোয়ার হোসেন (২৮), মো. খায়রুল ইসলম ওরফে কালু (২৮), সাইদুল ইসলাম সিকদার (৪৫) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)।
এর আগে তদন্তে স্ত্রী হত্যায় পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাবার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার তাকে চট্টগ্রাম আনা হয়। মঙ্গলবার (১১ মে) নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিয়ে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। তার আগে তিনি চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আক্তার নিজেই। তবে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী মনে করেন।
ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর ফলে সন্দেহের তীর যায় বাবুলের দিকে। হত্যায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পরে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দু'জনের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ করে পুলিশ। তারা আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শুরু থেকে গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছিল। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও কোনো অভিযোগপত্র দিতে পারেনি। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটি তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।
গত ৩০ জানুয়ারি মিতু হত্যা মামলায় তদন্তের সর্বশেষ লিখিত অগ্রগতির তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।