খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে অসুস্থ্য হয়ে একজনের মৃত্যু
মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা ও চট্টগ্রামের পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশনের তৃতীয় দিনে অসুস্থ হয়ে খুলনায় এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুস সাত্তার (৪৫) নামে ওই শ্রমিক মারা যান। তিনি প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলে কাজ করতেন।
প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাহানা শারমিন জানান, আমরণ অনশন চলাকালে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের গেটের সামনে বিআইডিসি সড়কে শ্রমিক আবদুস সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
অনশনরত পাটকল শ্রমিকের মৃত্যুতে খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। গত তিনদিনে শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের অনেককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া অসুস্থ অনেকে অনশনস্থলে স্যালাইন নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর খালিশপুর শিল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপর তাবু টানিয়ে শ্রমিকদের কেউ শুয়ে আছেন, আবার কেউ বসে আছেন। শ্রমিক নেতারা বক্তৃতা করছেন। কেউ কেউ দু:খের গান গেয়ে সময় কাটাচ্ছেন। তাবুর খুঁটিতে স্যালাইনের পাইপ বেঁধে অসুস্থদের দেওয়া হচ্ছে স্যালাইন। এরই মধ্যে দুই শ্রমিক অচেতন হয়ে পড়েন। তাদের ধরাধরি করে ইজিবাইকে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খালিশপুর জুট মিলের আমরণ অনশনরত শ্রমিক আকবর আলী মিয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, শ্রমিকরা নিজেদের কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছে। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয় তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।
শ্রমিক নেতা মুরাদ হোসেন বলেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় পাট মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পাটমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য গত বুধবার রাতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনার কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানেনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়সহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে তারা এ অনশন কর্মসূচি পালন করছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, শীতে এবং অনাহারে থাকায় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে ২৫/২৬ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনশন স্থানে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
আন্দোলনরত পাটকলগুলো হচ্ছে, ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল, ইস্টার্ন জুট মিল, কার্পেটিং জুট মিল ও জেজেআই জুট মিল।
প্রসঙ্গত, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়।