কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক রোজিনা
জামিন পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেন প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম।
অফিশিয়াল সিক্রেসি আইনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা এক মামলায় ৫ হাজার টাকা মুচলেকা ও পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে রোববার সকালে রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করে আদালত।
মুক্তি পাওয়ার পর রোজিনা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব। সাংবাদিকসহ যারা পাশে ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ।'
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার সাড়ে তিনটার দিকে ইমেইল যোগে প্রথম আলো সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের কাগজপত্র এসে পৌঁছায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ কাশিমপুর কারাগারের মূল ফটকে অপেক্ষমান রোজিনা ইসলামের স্বজনদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। পরিবারের ১৬ সদস্যের দুটি টিম আলাদা গাড়িতে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে রোজিনা ইসলামের জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পৌনে চারটার দিকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর আগে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে দুটি মাইক্রোবাস যোগে কারা ফটকে এসে পৌঁছান রোজিনা ইসলামের দেবর জহিরুল ইসলাম, প্রিন্স জাকারিয়া, বোন লীনা আক্তার , ভাগ্নি মারিয়া রাউকি, ননদ রুজিনা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, তার জামিনে মুক্তিলাভে স্বস্তি এসেছে সাংবাদিক মহলে। কারা ফটকে ফুল দিয়ে রোজিনা ইসলাম কে বরণ করে নেন তারা।
এর আগে রবিবার অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে' করা মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম বাকি বিল্লাহর ভার্চ্যুয়াল আদালত শর্ত সাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে তাকে তার পাসপোর্ট জমা দিতেও নির্দেশ দেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহর ভার্চ্যুয়াল আদালতে দুপুর ১২টা ৫২ মিনিট থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত শুনানির পর বিকেল ৪টায় আজ রোববার আদেশের কথা বলা হয়। সেখানে বলা হয়, এদিন রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশ হবে।
ওই দিন রোজিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি, আমিনুল গনি টিটু, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রশান্ত কুমার কর্মকার ও আশরাফুল আলম। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের জামিনের বিরোধিতা করেন হেমায়েত উদ্দিন হিরন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তারা দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্য রাতে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়। আদালত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
গত মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। এরপর রোজিনার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর প্রিজনভ্যানে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী। সচিবালয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর সোমবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। তার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে মন্ত্রণালয়।