সাকিবের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের ম্যাচে আবাহনীকে হারাল মোহামেডান
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই ধুন্ধমার লড়াই। হোক তা ফুটবল, ক্রিকেট বা হকির ম্যাচ। যদিও দুই দলের ঝাঁঝালো লড়াইয়ের সেই দিন আর নেই। ঐতিহ্যবাহী এই দুই ক্লাবের দ্বৈরথ নিয়ে এখন আর রোমাঞ্চিত হন না ক্রীড়ামোদীরা। অনেকদিন পর আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ থেকে ছড়ালো উত্তেজনা। তবে তা মাঠের লড়াই থেকে নয়, সাকিব আল হাসানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে।
শুক্রবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার এই ম্যাচে ডিএল মেথডে আবাহনীকে ৩১ রানে হারিয়েছে সাকিবের দল মোহামেডান। পাঁচ বছর পর আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ জিতলো মোহামেডান। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ মৌসুমে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে জিতেছিল দলটি।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে সাকিব ও মাহমুদুল হাসানের ব্যাটে ৬ উইকেটে ১৪৫ রান তোলে মোহামেডান। জবাবে শুরুতেই দিক হারানো আবাহনী ৫.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৩১ রান তোলার পর বৃষ্টি শুরু হয়। আবাহনীর নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯ ওভারে ৭৬ রান। ৫.৫ ওভার ব্যাটিং করে ফেলায় জিততে ১৯ বলে ৪৫ রান তুলতো হতো মুশফিকুর রহিমের দল আবাহনীকে। কিন্তু দলটি এই রান পাড়ি দিতে পারেনি। আবাহনীর ইনিংস থামে ৪৪ রানে।
আগের ব্যাটিং করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে মোহামেডানকে ৩৭ রান এনে দেন আব্দুল মজিদ ও পারভেজ হোসেন ইমন। বিশ্বজয়ী যুব দলের সদস্য ইমনের বিদায়ের পর ইরফান শুক্কুর ১৪ রান করেন। আব্দুল মজিদ ফেরেন ১৬ রান করে। এরপর মোহামেডানের রানচাকা ঘুরিয়েছেন সাকিব ও মাহমুদুল হাসান।
ব্যাট হাতে চরম বাজে সময় কাটানো সাকিব এই ম্যাচে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। ২৭ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৭ রান করেন মোহামেডান অধিনায়ক। চলতি লিগে সাত ম্যাচের এটাই তার সর্বোচ্চ ইনিংস। সাকিবের পর মোহামেডানকে এগিয়ে নেন মাহমুদুল। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২২ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ৩০ রান করেন। শেষ দিকে পেসার আবু হায়দার রনি ৭ বলে ১৪ রান করেন।
জবাবে আবাহনীর শুরুটা হয় চরম অগোছালো। তিন বলের মধ্যেই ওপেনার নাঈম শেখ ও একেএস স্বাধীনকে হারায় তারা। দলীয় ৯ রানে আফিফ হোসেনও ফিরে যান। তিনটি উইকেটই নেন ম্যাচ সেরা শুভাগত হোম। এখান থেকে দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। পঞ্চম ওভারের ষষ্ঠ বলে গিয়ে বাধে গণ্ডগোল।
সাকিবের করা শেষ ডেলিভারিটি মুশফিকের পায়ে লাগলে আবেদন করেন সাকিব। আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত জানানোর সময়ও দেননি বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। দুই সেকেন্ডের ব্যবধানে আম্পায়ারকে আক্রমণ করে বসেন সাকিব। লাথি মেরে স্টাম্প ভেঙে আম্পায়ার ইমরান পারভেজ রিপনের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। এ সময় আম্পায়ারকে গালি-গালাজ করেন মোহামেডান অধিনায়ক। তার সতীর্থরা এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
পরের ওভারে আরও ওদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করেন সাকিব। এই ওভারটি করতে আসেন মোহামেডানের অফ স্পিনার শুভাগত হোম। প্রথম দুই বলে দুটি চার হজম করতে হয় তাকে। ওভারের পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি শুরু হয়, উইকেট ঢাকার নির্দেশ দেন আম্পায়ার। এ সময় এক্সট্রা কভার থেকে দৌড়ে এসে দুই হাতে দুই স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন সাকিব। এরপরও সাকিবকে থামানো যাচ্ছিল না। গালি-গালাজ করতে করতে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
বৃষ্টির পর খেলা শুরু হয়। ১৯ বলে ৪৫ রান তুলতে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি আবাহনীর ব্যাটসম্যানরা। তাসকিন আহমেদের অসাধারণ একটি ইয়র্কারে ভেঙে যায় ১৫ রান করা শান্তর স্টাম্প। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকততে ফেরান আবু জায়েদ রাহি। মুশফিক ১৮ রানে অপরাজিত থাকলেও ব্যবধান থেকে যায় ৩১ রানের। ১৭ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন শুভাগত। তাসকিন ২টি ও রাহি একটি উইকেট নেন।