চারবার হাত বদলেছে পরিকল্পনামন্ত্রীর মুঠোফোন
১২ দিন আগে ছিনতাই হওয়া পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মুঠোফোন এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ, তবে ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করতে পেরেছে। তবে এরমধ্যেই ফোনটি চারবার হাত বদলেছে।
শুক্রবার (১১ জুন) পুলিশের মিরপুর ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার এ এস এম মাহাতাবউদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিজয় সরণির মডেল বিমানটির নিচে এক ভবঘুরে থাকতো। সে-ই মন্ত্রীর মোবাইলটি কেড়ে নেয়, এসময় সে লাল রঙের টিশার্ট পরে ছিল।
তবে ওই এলাকায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় মন্ত্রীর গাড়ি চালক ও গানম্যানের সহায়তা নিয়ে ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
"আমরা ওই এলাকার ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের বর্ণনার সঙ্গে আমাদের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
মাহাতাবউদ্দিন বলেন, এধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত এক গ্যাঙয়ের সাব-ডিলারের কাছে মুঠোফোনটি বিক্রি করে দেয় ওই ছিনতাইকারী।
পরবর্তীতে ওই চক্রের মূল হোতা ৩৫ হাজার টাকা মূল্যে মুঠোফোনটি রাজধানীর এক শোরুমের মালিকের কাছে বিক্রি করে দেন। তার একদিন পর ওই শোরুমের মালিক এক ব্যক্তির কাছে সেটি বিক্রি করে দেন। মুঠোফোনটি বর্তমানে তার কাছেই আছে।
"বর্তমানে যার কাছে মুঠোফোনটি রয়েছে তিনি হয়তো শুনেছেন এটি পরিকল্পনামন্ত্রীর। একারণেই ভয় পেয়ে সিম কার্ড ঢোকাননি," জানান মাহতাবউদ্দিন।
"ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রী তার সিম কার্ড রিপ্লেস করে নেওয়ায় আমাদের কাজ আরও জটিল হয়ে পড়েছে," বলেন তিনি।
তিনি জানান, পুলিশ বেশ কয়েকটি আইফোন টেন হ্যান্ডসেট উদ্ধার করেছে, কিন্তু এর কোনোটিই মন্ত্রীর নয়। মন্ত্রীর মুঠোফোনটির দাম প্রায় এক লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর ডিভিশনের পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তারা মুঠোফোনটি উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
"আমরা বিজয় সরণি, চন্দ্রিমা উদ্যান ও আশেপাশের এলাকার কয়েক ডজন ভবঘুরে, হকার ও পথশিশুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মিরপুর ও তেজগাঁও থানার প্রায় এক ডজন পুলিশ কর্মকর্তা এ কাজে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন," বলেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হুমায়ুন কবির দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তিনি প্রতিদিন পুলিশের কাছ থেকে আপডেট পাচ্ছেন।
"মন্ত্রী দ্রুতই সিম কার্ড রিপ্লেস করে ফেলার কারণেই হয়তো মুঠোফোনটি শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে," বলেন তিনি।
তেজগাঁও ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ জানান, তার ডিভিশনের পুলিশ কর্মকর্তারাও মুঠোফোনটি উদ্ধারে সহযোগিতা করেছেন।
সাবেক সাব-ইন্সপেক্টর ও বর্তমানে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য ইসমাইল হোসেন জুয়েল তার ছয় মাস কর্মরত সময়ে ৭০টির বেশি মুঠোফোন উদ্ধার করেছেন। তিনি জানান, মুঠোফোনে সিম কার্ড না থাকলে কোনও প্রযুক্তির মাধ্যমেই তা শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
"শুধু মুঠোফোনে সিম কার্ড সংযুক্ত করার পরই আমরা শতাধিক মুঠোফোন উদ্ধার করেছি," যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রোববার (৩০ মে) সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বিজয় সরণী সিগন্যালে তিনি যখন নিজের গাড়িতে বসে ছিলেন, তখন তার মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়।
তার গাড়ির জানালার কাঁচ নামানো ছিল। মন্ত্রী তখন মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছিলেন। হুট করেই তার হাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয়ের ওই ভবঘুরে ফোনটি ছিনিয়ে নেয়।