ইলিয়াস সানিকে ইট ছুঁড়ে মারলেন সাব্বির, করলেন গালি-গালাজও
বিতর্ক আর সাব্বির রহমান যেন একই সূত্রে গাঁথা। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই ক্রিকেটার এরআগে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। খেলা চলাকালীন গ্যালারিতে গিয়ে দর্শক পিটিয়ে ছয় মাস নিষিদ্ধ পর্যন্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু সাব্বির এবার যে কাণ্ড ঘটালেন, তা কোনো ক্রিকেটীয় আচরণের মধ্যেই পড়ে না। মাঠের বাইরে থেকে ইলিয়াস সানিকে ইট ছুঁড়ে মেরেছেন তিনি। বর্ণবাদী আচরণ করার পাশাপাশি ইলিয়াস সানিকে গালি-গালাজও করেছেন সাব্বির।
এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। সিসিডিএম চেয়ারম্যান ও বিসিবি পরিচালক কাজী ইনাম বরাবর চিঠি পাঠিয়ে সাব্বিরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছে শেখ জামাল।
চিঠির বিষয়ে সিসিডিএমের সদস্য সচিব আলী হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'হ্যাঁ, ঘটনা আমরাও শুনেছি। অভিযোগের চিঠিও আমাদের চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া হয়েছে। যতটা জানি সাব্বির নাকি ঢিল দিয়েছেন সানিকে এমনটাই অভিযোগ করা হয়েছে। এখন আমরা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত জানাব।'
ঘটনাটি বুধবারের। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ওল্ডডিওএইসএসের বিপক্ষে লড়ছিল শেখ জামাল। ডিএইসএসকে ১২১ রানের লক্ষ্য দিয়ে শেখ জামাল তখন ফিল্ডিয়ে। ডিপ স্কয়ার লেগে ফিল্ডিং করছিলেন শেখ জামালের স্পিনার ইলিয়াস সানি। এমন সময় হঠাৎ মাঠের বাইরে থেকে ইলিয়াস সানিকে ইট ছুঁড়ে মারেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ক্রিকেটার সাব্বির রহমান।
কেবল ইট ছুঁড়ে মারাই নয়, ইলিয়াস সানিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন সাব্বির। বর্ণ বৈষ্যমূলক আচরণও করতে থাকেন রূপগঞ্জের এই ক্রিকেটার। শেখ জামাল সূত্রে জানা গেছে, পুরনো ক্ষোভ থেকেই এমনটি করতে পারেন তিনি। এরআগে শেখ জামালের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় বোলার ইলিয়াস সানির সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়ান সাব্বির। সেদিনও ইলিয়াস সানিকে গালি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে শেখ জামালের সূত্রটি।
বুধবার সকালে ম্যাচ ছিল শেখ জামালের। ওল্ড ডিওএইসএসের বিপক্ষে তিন নম্বর মাঠে খেলছিল তারা। এদিনই দুপুর দেড়টায় বিকেএসপির পাশের মাঠে (চার নম্বর মাঠ) পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে মুখোমুখি হতে যাচ্ছিল সাব্বিরদের দল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। পাশের মাঠ হওয়ায় শেখ জামাল-ডিওএইসএস ম্যাচ দেখছিলেন পরের ম্যাচ খেলতে নামার অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটাররা। এ সময়ই ইলিয়াস সানিকে আক্রমণ করেন সাব্বির। এই ঘটনায় কয়েক মিনিটের জন্য ম্যাচ বন্ধ থাকে।
সিসিডিএমকে পাঠানো অভিযোগের চিঠিতে শেখ জামাল লিখেছে, 'অত্যন্ত দুঃখের সহিত জানাইতেছি যে, অদ্য ১৬ জুন ২০২১ তারিখে বিকেএসপি এর ৩নং মাঠে লেঃ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড বনাম ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব এর মধ্যকার খেলা চলাকালীন সময়ে লেঃ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড- এর খেলোয়াড় জনাব মোহাম্মদ ইলিয়াসকে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ এর খেলোয়াড় জনাব সাব্বির রহমান রুম্মন মাঠের বাহির হতে বিনা কারনে উপুর্যপরি ইট ছুড়ে মারেন।'
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, 'অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও উচ্চস্বরে বর্ণ বৈষম্য মূলক আচরণ করে বলেন যে, ওই কাইল্যা, কাইল্যা, কাইল্যা ইলিয়াস। যাহা একজন প্রফেশনাল ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে এহেন আচরণ অশোভনীয়ই নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। এমতাবস্থায়, জনাব সাব্বির রহমান রুম্মন এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।'
পুরো ঘটনার জের ধরে সাব্বির এমন করে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন ইলিয়াস সানি। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'গত রোববার রূপগঞ্জের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ ছিল। সেদিন আমি ব্যাটিংয়ে নামার পরই সাব্বির হুট করে আমাকে খুব বাজে গালি দেয়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, 'তুই কি এটার মানে জানিস?' এরপর সে আবার একই গালি দেয়। তিন দফায় গালি দেয়। তখন আমাদের কয়েকজনের সঙ্গে ওদের কথা কাটাকাটি হয়।'
'গালিগালাজের পরও আমি মাঠের ঘটনা মাঠেই রেখেছিলাম। আজ আমাদের খেলা ছিল ওল্ড ডিওএইচএসের সঙ্গে। আমি বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করছিলাম। সাব্বিরদের খেলা ছিল দুপুরে। সে ম্যাচ খেলার জন্য মাঠে এসে বাস থেকে নেমেই আমাকে 'কাইল্যা, কাইল্যা', এই ধরনের কথা বলতে থাকে। আমি তবু পাত্তা দেইনি। এরপর সে ঢিল মারে। এক পর্যায়ে আমি আম্পায়ারদের জানাতে বাধ্য হই।' যোগ করেন ইলিয়াস সানি।
যদিও এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন সাব্বির। রূপগঞ্জের এই ক্রিকেটার বলেন, 'তাদের সাথে আজ কোনো খেলাই হয়নি। এটা কি সম্ভব? একটা জাতীয় দলের খেলোয়াড় আরেকটা খেলোয়াড়কে ইঁট ছুঁড়ে মারতে পারে? তাও আবার আমার সিনিয়র ভাই। ওখানে আরও ৩০ জন খেলোয়াড় ছিল দুই দলের। এটা কীভাবে সম্ভব?'
সাব্বির আরও বলেন, 'প্রশ্নই ওঠে না, কেউ বানিয়ে যদি বলে- মানুষ তো খায়। কেউ যদি বানিয়ে বলে ফেলে, কিছু তো বলার নাই। আমার নিজেরই হাসি পাচ্ছে। আমার কোনো বক্তব্য নেই। যে কাজটা করিনি, যেটা সম্ভব না, সেটায় কোনো বক্তব্য নেই। আমি কেন করব? জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়ে আরেক জাতীয় ক্রিকেটার বড় ভাইকে ইট মারব, এতো সোজা?'
অভিযোগ অস্বীকার করলেও পাল্টা অভিযোগ তুলে সাব্বির তার ক্লাবের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সাব্বির বলেন, 'ক্লাবের মাধ্যমে আমিও বলব যে আমাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। এক হাতে তালি বাজে না। উনিও আমাকে বাবা-তুলে গালিগালাজ করেছেন। আমি তো এসব অভিযোগ করিনি। আমিও তাহলে আমার ক্লাবকে বলব ব্যবস্থা নিতে।'